আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগ । এটি নবম – দশম শ্রেনী গণিতের বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত।
আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের যোগ ও বিয়োগ
আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের যোগ বা বিয়োগ করতে হলে আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে সদৃশ আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশে পরিবর্তন করতে হবে। এরপর সসীম দশমিক ভগ্নাংশের নিয়মে যোগ বা বিয়োগ করতে হবে। সসীম দশমিক ও আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশগুলোর মধ্যে যোগ বা বিয়োগ করতে হলে আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে সদৃশ করার সময় প্রত্যেকটি আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে সসীম দশমিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর পরের অঙ্ক সংখ্যা ও অন্যান্য আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশের অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সংখ্যা সে সংখ্যার সমান।
আর আবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে যথানিয়মে প্রাপ্ত ল.সা.গু. এর সমান এবং সসীম দশমিক ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে আবৃত্ত অংশের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শূন্য বসাতে হবে। এরপর সসীম দশমিক ভগ্নাংশের নিয়মে যোগ বা বিয়োগ করতে হবে। এভাবে প্রাপ্ত যোগফল বা বিয়োগফল প্রকৃত যোগফল বা বিয়োগফল হবে না।
প্রকৃত যোগফল বা বিয়োগফল বের করতে হলে দেখতে হবে যে সদৃশকৃত দশমিক ভগ্নাংশগুলো যোগ বা বিয়োগ করলে প্রত্যেকটি সদৃশকৃত দশমিক ভগ্নাংশগুলোর আবৃত্ত অংশের সর্ববামের অঙ্কগুলোর যোগ বা বিয়োগে হাতে যে সংখ্যাটি থাকে, তা প্রাপ্ত যোগফল বা বিয়োগফলের আবৃত্ত অংশের সর্বডানের অঙ্কের সাথে যোগ বা অঙ্ক থেকে বিয়োগ করলে প্রকৃত যোগফল বা বিয়োগফল পাওয়া যাবে। এটিই নির্ণেয় যোগফল বা বিয়োগফল হবে।
মন্তব্য:
১. আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের যোগফল বা বিয়োগফলও আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশ হয়। এই যোগফল বা বিয়োগফলে অনাবৃত্ত অংশ আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অনাবৃত্ত অংশবিশিষ্ট আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশটির অনাবৃত্ত অঙ্ক সংখ্যার সমান হবে এবং আবৃত্ত অংশ আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশগুলোর আবৃত্ত অঙ্ক সংখ্যার ল.সা.গু. এর সমান সংখ্যক আবৃত্ত অঙ্ক হবে। সসীম দশ-মিক ভগ্নাংশ থাকলে প্রত্যেকটি আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশের অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে সসীম দশ-মিক ভগ্নাংশের দশমিক বিন্দুর পরের অঙ্ক সংখ্যা ও অন্যান্য আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশের অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সংখ্যা সে সংখ্যার সমান।
২. আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে সামান্য ভগ্নাংশে পরিবর্তন করে ভগ্নাংশের নিয়মে যোগফল বা বিয়োগফল বের করার পর যোগফল বা বিয়োগফলকে আবার দশ-মিক ভগ্নাংশে পরিবর্তন করেও যোগ বা বিয়োগ করা যায়। তবে এ পদ্ধতিতে যোগ বা বিয়োগ করলে বেশি সময় লাগবে।
উদাহরণ ১০.
3.89, 2.178 35.89798 যোগ কর।
সমাধান:
এখানে অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে 2 এবং আবৃত্ত অংশের অঙ্ক হবে 2, 2 3 3 এর ল.সা.গু. 6। প্রথমে তিনটি আবৃত্ত দশমিককে সদৃশ করা হয়েছে।
3.89 = 3.89898989
2.178 = 2.17878787
5.89798 = 5.89798798
11.97576574 [8+ 8 + 7 + 2 = 25, এখানে 2 হাতের 2 এখানে 25 এর 2 যোগ হয়েছে]
+2
11.97576576
নির্ণেয় যোগফল 11.97576576 বা 11.97576
মন্তব্য:
এই যোগফলে 576576 আবৃত্ত অংশ। কিন্তু কেবল 576 কে আবৃত্ত অংশ করলে মানের কোনো পরিবর্তন হয় না।
দ্রষ্টব্য:
সর্বডানে যোগের ধারণা বোঝাবার জন্য এ যোগটি অন্য নিয়মে করা হলো:
3.89 = 3.89898989
2.178 = 2.17878787
5.89798 = 5.89798798
11.97576574
এখানে আবৃত্ত অংশ শেষ হওয়ার পর আরও অঙ্ক পর্যন্ত সংখ্যাকে বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত অঙ্কগুলোকে একটা খাড়া রেখা দ্বারা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এরপর যোগ করা হয়েছে। খাড়া রেখার ডানের অঙ্কের যোগফল থেকে হাতের 2 এসে খাড়া রেখার বামের অঙ্কের সাথে যোগ হয়েছে। খাড়া রেখার ডানের অঙ্কটি আর পৌনঃপুনিক বিন্দু শুরু হওয়ার অঙ্কটি একই। তাই দুইটি যোগফলই এক।
উদাহরণ ১১.
8.9478, 2.346 ও 4.71 যোগ কর।
সমাধান:
দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে সদৃশ করতে হলে অনাবৃত্ত অংশ ও অঙ্কের এবং আবৃত্ত অংশ হবে 3 ও 2 এর ল.সা.গু. 6 অঙ্কের। এবার দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে যোগ করা হবে।
8.94788.947847847
2.346 = 2.346000000
4.71 = 4.717171717
1 011019564 [8+0+1 + 1 = 10, এখানে 1 হাতের 1 এখানে 10 এর 1 যোগ হয়েছে]
+1
16.011019565
নির্ণেয় যোগফল 16.011019565 ।
উদাহরণ ১২.
4.243 থেকে 524673 বিয়োগ কর।
সমাধান:
এখানে অনাবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে 2 এবং আবৃত্ত অংশের অঙ্ক সংখ্যা হবে 2 ও 3 এর ল.সা.গু. 6। এখন দশমিক সংখ্যা দুইটিকে সদৃশ করে বিয়োগ করা হলো।
8.243 = 8.24343434
5.246735.24673673
2.99669761 [ 3 থেকে 6 বিয়োগ করলে হাতে 1 নিতে হবে]
নির্ণেয় বিয়োগফল 2.99669760
মন্তব্য:
পৌনঃপুনিক বিন্দু যেখানে শুরু সেখানে বিয়োজন সংখ্যা বিয়োজ্য সংখ্যা থেকে ছোট হলে সব সময় সর্বডানের অঙ্ক থেকে 1 বিয়োগ করতে হবে।
দ্রষ্টব্য:
সর্বডানের অঙ্ক থেকে 1 কেন বিয়োগ করা হয় তা বোঝাবার জন্য নিচে অন্যভাবে বিয়োগ করে দেখানো হলো:
8.243 = 8.24343434|34
5.246735.24673673167
2.99669760167
নির্ণেয় বিয়োগফল 2.99669760 | 67। এখানে দুইটি বিয়োগফলই এক।
উদাহরণ ১৩.
24.45645 থেকে 16.437 বিয়োগ কর।
সমাধান :
24.45645 = 24.45645
16.437 = 16.43743
8.01901 [ 6 থেকে 7 বিয়োগ করলে হাতে 1 নিতে হবে]
8. 01902 -1
নির্ণেয় বিয়োগফল 8.01901
দ্রষ্টব্য:
সর্বডানের অঙ্ক থেকে 1 কেন বিয়োগ করা হয় তা বোঝাবার জন্য নিচে অন্যভাবে বিয়োগ করে দেখানো হলো।
24.45645 = 24.45645|64
16.437 = 16.43743 74 8.01901 190

আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের গুণ ও ভাগ
আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশগুলোকে সাধারণ ভগ্নাংশে পরিণত করে গুণ বা ভাগের কাজ সমাধা করে প্রাপ্ত ভগ্নাংশটিকে দশ-মিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করলেই আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশগুলোর গুণফল বা ভাগফল হবে। সসীম দশ-মিক ভগ্নাংশ ও আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশের মধ্যে গুণ বা ভাগ করতে হলে এ নিয়মেই করতে হবে। তবে ভাগের ক্ষেত্রে ভাজ্য ও ভাজক দুইটিই আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশ হলে, উভয়কে সদৃশ আবৃত্ত দশ-মিক ভগ্নাংশ করে নিলে ভাগের কাজ একটু সহজ হয়।
উদাহরণ ১৪
4.3 কে 5.7 দ্বারা গুণ কর।
সমাধান :
4.3 = (43-4)/9 = 39/9 = 13/3
5.7 = (57 – 5)/9 = 52/9
… 4.3 x 5.7 = 13/3 x 52/9 = 676/27 = 25.037
নির্ণেয় গুণফল 25.037
উদাহরণ ১৫.
0.28 কে 42.18 দ্বারা গুণ কর।
সমাধান:
0.28 = (28 – 2)/ 90 = 26/90 = 13 /45
42.18 = (4218-42 )/99 = 4176/99 = 464/11
0.28 x 42.18 = 13/45 x 464/11 = 6032/495 = 12.185
নির্ণেয় গুণফল 12.185
উদাহরণ ১৬.
2.5 x 4.35 x 1234 কত?
সমাধান : 2.5 = 25/10 = 5/2
4.35 = (435 – 43)/90 = 392/ 90
1.234 = (1234-12)/990 = 1222/990 = 611/495
2.5 x 4.35 x 1.234 = 5/2 x 392/90 x 611/495 = 119756/8910 = 13.440628…
নির্ণেয় গুণফল 13.440628 (প্রায়)
উদাহরণ ১৭.
7.32 কে 0.27 দ্বারা ভাগ কর।
সমাধান:
7.32 0.27 = 732-7 99 27-2 25 = 90 90 725 99 = = 5 18
7.32 0.27= 725 5 ÷ 99 18 725 18 99 5 290 11 = 26.36
নির্ণেয় ভাগফল 26.36
উদাহরণ ১৮.
2.2718 কে 1.912 দ্বারা ভাগ কর।
সমাধান :
2.2718 = (22718 – 2)/ 9999 = 22716 /9999
1.912 = (1912 – 19)/ 990 = 1893/ 990
2.2718 ÷ 1.912 = 22716/ 9999 ÷ 1893/990 = 22716/ 9999 x 990/1893 = 120/101 = 1.1881
নির্ণেয় ভাগফল 1.188i
উদাহরণ ১৯.
9.45 কে 2.863 দ্বারা ভাগ কর।
সমাধান :
9.45= 945 /100
2.863 = (2863 – 28)/ 990 = 2835/990
9.45 ÷ 2.863 = 945/100 ÷ 2835/990 = 945 /100 x 990/2835 = 189 x 99/ 2 x 2835 = 33/10 = 3.3
নির্ণেয় ভাগফল 3.3
মন্তব্য:
আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশের গুণফল ও ভাগফল আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ নাও হতে পারে।
আরও দেখুনঃ