আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ইউক্লিড পদ্ধতিতে ভাগ প্রক্রিয়ায় গসাগু নির্ণয় – যা মৌলিক উৎপাদকের গাছ এর অন্তর্ভুক্ত। গণিত হল জ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যাতে সংখ্যা, সূত্র এবং সম্পর্কিত কাঠামো, আকার এবং সেগুলির মধ্যে থাকা স্থানগুলি এবং পরিমাণ এবং তাদের পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিষয়গুলি যথাক্রমে সংখ্যা তত্ত্বের প্রধান উপশাখা,বীজগণিত, জ্যামিতি, এবং বিশ্লেষণ। তবে একাডেমিক শৃঙ্খলার জন্য একটি সাধারণ সংজ্ঞা সম্পর্কে গণিতবিদদের মধ্যে কোন সাধারণ ঐকমত্য নেই।
গণিতে সংখ্যা ও অন্যান্য পরিমাপযোগ্য রাশিসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়। গণিতবিদগন বিশৃঙ্খল ও অসমাধানযুক্ত সমস্যাকে শৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া খুঁজে বেড়ান ও তা সমাধানে নতুন ধারণা প্রদান করে থাকেন।গাণিতিক প্রমাণের মাধ্যমে এই ধারণাগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত গবেষণায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বা শত শত বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। গণিতের সার্বজনীন ভাষা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা একে অপরের সাথে ধারণার আদান-প্রদান করেন। গণিত তাই বিজ্ঞানের ভাষা।
ইউক্লিড পদ্ধতিতে ভাগ প্রক্রিয়ায় গসাগু নির্ণয়
ছবিতে গসাগু নির্ণয়
তোমরা দুইটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয়ের দুইটি উপায় সম্পর্কে জেনেছ।
প্রথম পদ্ধতি
- সংখ্যা দুইটির সবগুলো গুণনীয়ক বা উৎপাদকের তালিকা তৈরি করো।
- তালিকা থেকে সংখ্যা দুইটির সাধারণ উৎপাদকগুলো খুঁজে বের করো।
- এবার সাধারণ উৎপাদকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যাটিই হবে ঐ সংখ্যাদুইটির গসাগু।
উদাহরণ
২০ এর গুণনীয়ক | ১, ২, ৪, ৫, ১০, ২০ |
অর্থাৎ গসাগু = ৪
|
৩২ এর গুণনীয়ক | ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ |
দ্বিতীয় পদ্ধতি
- সংখ্যা দুইটিকে মৌলিক উৎপাদক গাছের সাহায্যে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করো।
- সংখ্যা দুইটির সাধারণ মৌলিক উৎপাদকগুলো খুঁজে বের করো।
- এবার সাধারণ মৌলিক উৎপাদকগুলোর গুণফলই হবে ঐ সংখ্যা দুইটির গসাগু।
উপরের দুইটি পদ্ধতিতেই উৎপাদকের তালিকা তৈরি অথবা মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণের জন্য অনেকবার সংখ্যা দুইটিকে ভাগ করার প্রয়োজন হয়। আর সংখ্যা দুইটি অনেক বড় হলে সেক্ষেত্রে দুই পদ্ধতিতেই গসাগু নির্ণয় করতে বেশ সময় লাগবে।
এই গসাগু নির্ণয়ের কাজটা আরেকটু সহজ করার জন্য গণিতবিদ Euclid (300 B.C অর্থাৎ ৩০০ খ্রি. পূর্ব) অন্য একটি মজার পদ্ধতি খুঁজে পান। অবশ্য Nicomachus নামের আরও একজন গণিতবিদ এই গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি জানতেন। পাশের ছবিটি দেখো।
এখন সেই মজার পদ্ধতিতেই ৪৪ ও ১৮ এর গসাগু নির্ণয় করা হবে।
- প্রথমে স্কেলের সাহায্যে একটি ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৫ সেমি প্রস্থের কাগজের স্ট্রিপ কেটে নাও।
- এবার ১৮ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৫ সেমি প্রস্থের কয়েকটি কাগজের স্ট্রিপ কেটে নাও। (এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্যের পরিমাপই গসাগু নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি স্ট্রিপের প্রস্থ ৫ সেমি এর পরিবর্তে অন্য যেকোনো সুবিধাজনক পরিমাপ নিতে পারো। তবে সেক্ষেত্রে সবগুলো স্ট্রিপ একই প্রস্থবিশিষ্ট নিলে সুবিধা হবে।)
- এবার ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপটি বসাও। ৪৪ সেমি দৈর্ঘ্য পূরণ হতে আরও ২৬ সেমি বাকি আছে।
- এখন বলো তো সর্বোচ্চ কতগুলো ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানো যাবে যেন মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ সেমি এর বেশি না হয়?
- ছবিতে দেখতে পাচ্ছ দুইটি ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর বাকি থাকে ৮ সেমি।
- এবারে কয়েকটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ তৈরি করে একটি ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে বসাও।
- ছবিতে দেখতে পাচ্ছ দুইটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর ১৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ পূরণ করতে বাকি থাকে ২ সেমি।
- এরপর কয়েকটি ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ তৈরি করে একটি ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপের পাশে বসাও।
- ছবিতে দেখতে পাচ্ছ চারটি ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ বসানোর পর ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ সম্পূর্ণ পূরণ হয়ে যাচ্ছে।
- এবার আমাদের কাজ শেষ এবং সবশেষে ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ দিয়ে আমরা ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের একটা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। কাজেই, ৪৪ এবং ১৮ এর গসাগু হবে ২।
কিন্তু কেন এই কাগজের স্ট্রিপ পূরণ করতে করতে আমরা গসাগু পেয়ে গেলাম সেটাও তো জানতে হবে। উত্তরটা লুকিয়ে আছে গুণিতকের ধারণার মধ্যে।
নিচের ছবিতে নিজেই দেখে নাও।
সবশেষে ২ সেমি দৈর্ঘ্যের স্ট্রিপ দিয়ে আমরা ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের একটা স্ট্রিপ সম্পূর্ণ করতে পেরেছি।
তাহলে, ২ কিন্তু ৮ এর গুণনীয়ক।
ছবি থেকে এটাও বোঝা যাচ্ছে, ২ কিন্তু ১৮ এবং ৪৪ দুইটি সংখ্যারই গুণনীয়ক।
তার মানে, ২ সংখ্যাটি যে ৪৪ ও ১৮ দুইটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখন, শেষ প্রশ্ন থাকবে তোমাদের কাছে:
২ সংখ্যাটি ৪৪ ও ১৮ এর সবচেয়ে বড় বা গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক সেটা কি উপরের পদ্ধতিতে ছবি থেকে প্রমাণ করা যায়? শুরুতে প্রত্যেকে আলাদা করে চিন্তা করে দেখো।
এরপর শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে তোমার চিন্তা বা মতামত সবাইকে প্রদর্শন করো এবং দলগত আলোচনা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে সবাই মিলে প্রমাণটি সম্পূর্ণ করো। ভাগ প্রক্রিয়ার সাথে ইউক্লিড পদ্ধতিতে গসাগু নির্ণয়ের একটিভিটির সম্পর্ক:
ছবিতে তিনটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয়:
আরও দেখুনঃ