গুণোত্তর ধারা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ গুণোত্তর ধারা। এটি নবম – দশম শ্রেনী গণিতের সসীম ধারার অন্তর্গত।

 

গুণোত্তর ধারা

 

গুণোত্তর ধারা

কোনো ধারার যেকোনো পদ ও এর পূর্ববর্তী পদের অনুপাত সব সময় সমান হলে অর্থাৎ, যেকোনো পদকে এর পূর্ববর্তী পদ দ্বারা ভাগ করে ভাগফল সর্বদা সমান পাওয়া গেলে, সে ধারাটিকে গুণোত্তর ধারা বলে এবং ভাগফলকে সাধারণ অনুপাত বলে। যেমন, 2 + 4 + 8 + 16 + 32 ধারাটির প্রথম পদ 2, দ্বিতীয় পদ 4, তৃতীয় পদ ৪, চতুর্থ পদ 16, পঞ্চম পদ 32। এখানে,

দ্বিতীয় পদের সাথে প্রথম পদের অনুপাত = 4/2 = 2

তৃতীয় পদের সাথে দ্বিতীয় পদের অনুপাত = 8/4 = 2

চতুর্থ পদের সাথে তৃতীয় পদের অনুপাত = 16/8 = 2

পঞ্চম পদের সাথে চতুর্থ পদের অনুপাত = 32/16 = 2

সুতরাং, ধারাটি একটি গুণোত্তর ধারা। এই ধারায় যেকোনো পদ ও এর পূর্ববর্তী পদের অনুপাত সর্বদা সমান। উল্লেখিত ধারায় সাধারণ অনুপাত 2। ধারাটির পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট। এ জন্য এটি একটি গুণোত্তর সসীম ধারা।

ভৌত ও জীব বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ব্যাংক ও বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন প্রকার প্রযুক্তি বিদ্যায় গুণোত্তর ধারার ব্যাপক প্রয়োগ আছে।

গুণোত্তর ধারার পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট না থাকলে একে অনন্ত গুণোত্তর ধারা বলে।

গুণোত্তর ধারার প্রথম পদকে সাধারণত a দ্বারা এবং সাধারণ অনুপাতকে r দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তাহলে সংজ্ঞানুসারে, প্রথম পদ a. হলে, দ্বিতীয় পদ ar, তৃতীয় পদ ar” ইত্যাদি। সুতরাং ধারাটি হবে, a+ar+ar2 + ar3 + …

 

গুণোত্তর ধারা

 

গুণোত্তর ধারার সাধারণ পদ

মনে করি, যেকোনো গুণোত্তর ধারার প্রথম পদ a, সাধারণ অনুপাত r, তাহলে ধারাটির

প্ৰথম পদ = a = ar1-1

দ্বিতীয় পদ = ar = ar2-1

তৃতীয় পদ = ar2 = a3-1

চতুর্থ পদ= ar3 = ar4-1

… …

… …

n তম পদ = arn-1

এই n তম পদকেই গুণোত্তর ধারার সাধারণ পদ বলা হয়। কোনো গুণোত্তর ধারার প্রথম পদ a ও সাধারণ অনুপাত । জানা থাকলে n তম পদে পর্যায়ক্রমে r = 1, 2, 3, … ইত্যাদি বসিয়ে ধারাটির যেকোনো পদ নির্ণয় করা যায়।

উদাহরণ ৭.

2 + 4 + 8 + 16 + ধারাটির 10 তম পদ কত?

সমাধান:

ধারাটির প্রথম পদ a = 2, সাধরণ অনুপাত r = 4/2 = 2

প্রদত্ত ধারাটি একটি গুণোত্তর ধারা।

আমরা জানি, গুণোত্তর ধারার n তম পদ = apr-1

ধারাটির 10 তম পদ = 2 x 2^10 – 1 = 2 x 2^9 = 1024

 

গুণোত্তর ধারা

 

উদাহরণ ৮.

128 + 64 + 32 +… ধারাটির সাধারণ পদ কত?

সমাধান:

প্রদত্ত ধারাটির প্রথম পদ a = 128, সাধারণ অনুপাত r = 64/128 = 1/2

ইহা একটি গুণোত্তর ধারা।

আমরা জানি, গুণোত্তর ধারার সাধারণ পদ = arn-1

সুতরাং, ধারাটির সাধারণ পদ = 128 x (1/2)n-1 = 27/ 2n-1 = 1/ 2^(n-1-7) 1/2n-8

উদাহরণ ৯.

একটি গুণোত্তর ধারার প্রথম ও দ্বিতীয় পদ যথাক্রমে 27 এবং 9 হলে, ধারাটির পঞ্চম পদ এবং দশম পদ নির্ণয় কর।

সমাধান:

প্রদত্ত ধারাটির প্রথম পদ a = 27, দ্বিতীয় পদ = 9

তাহলে সাধারণ অনুপাত r = 9/ 27 = 1/3

পঞ্চম পদ = ar5-1 = 27 x (1/3) 4 = (27 × 1 )/(27 x 3) = 1/3

এবং দশম পদ = ar10-1 = 27 × (1/3)9 = 33/(33 x 36 ) = 1/729

 

গুণোত্তর ধারা

 

গুণোত্তর ধারার সমষ্টি নির্ণয়

মনে করি, গুণোত্তর ধারার প্রথম পদ a, সাধারণ অনুপাত । এবং পদ সংখ্যা n। যদি n সংখ্যক পদের সমষ্টি Sn হয়, তাহলে

S = a+ar+ar2 +…+ arn-2 +arn-1 … (1)

এবং r · Sn = ar + ar2 + ar3 + …. + arn – 1 + arn  [(1) কে r দ্বারা গুণ করে ] … (2)

বিয়োগ করে, Sn – rSn = a – arn

বা, Sn (1 – r) = a (1 – rn)

Sn = a(1 − rn)/(1 – r)  যখন r < 1

আবার (2) থেকে (1) বিয়োগ করে পাই,

rSn – Sn = arn – a

বা, Sn (r – 1 ) = a (rn – 1 )

Sn = a (rn – 1 )/(r – 1 ) যখন r > 1

লক্ষণীয়:

সাধারণ অনুপাত r = 1 হলে প্রত্যেক পদ = a

সুতরাং, এক্ষেত্রে Sn = a+a+a+ …n পদ পর্যন্ত = an

 

গুণোত্তর ধারা

 

উদাহরণ ১০.

12+24+48 + … + 768 ধারাটির সমষ্টি কত?

সমাধান:

প্রদত্ত ধারাটির প্রথম পদ a = 12, সাধারণ অনুপাত r = 24/12 = 2> 11

ধারাটি একটি গুণোত্তর ধারা।

মনে করি, ধারাটির n তম পদ = 768

আমরা জানি, n তম পদ = arn-1

arn-1 = 768

বা, 12 x 2n− 1 = 768

বা, 2n− 1 =  768/12 = 64

বা, 2n-1 = 26

বা, n − 1 = 6

… n = 7

সুতরাং, ধারাটির সমষ্টি = a(rn-1)/(r-1), যখন r > 1

= 12(2^7 – 1)/(2-1) = 12 × (128 – 1 ) = 12 x 127 = 1524

উদাহরণ ১১.

1 + 1/2 + 1/4 + 1/8 + …… ধারাটির প্রথম আটটি পদের সমষ্টি নির্ণয় কর।

সমাধান:

প্রদত্ত ধারাটির প্রথম পদ a = 1, সাধারণ অনুপাত r = 1/2/1 = 1/2 < 1

ইহা একটি গুণোত্তর ধারা। এখানে পদ সংখ্যা n = 8

আমরা জানি, গুণোত্তর ধারার n সংখ্যক পদের সমষ্টি

Sn = a(1 – rn)/(1-r ) , যখন r < 1

সুতরাং, ধারাটির ৪ টি পদের সমষ্টি S8 = 1 × {1-(1/2)8}/(1-1/2) = (1 – 1/256)/(1/2)

2{(256 – 1)/256} = 255/128 = 1.127/128

 

গুণোত্তর ধারা

 

উদাহরণ ১২.

পলাশ সরকার 2005 সালের জানুয়ারি মাসে বার্ষিক 120000 টাকা বেতনে চাকুরীতে যোগদান করলেন। তার বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ প্রতি বছর 5000 টাকা। প্রতি বছর তার বেতন থেকে 10% ভবিষ্যৎ তহবিল হিসেবে কর্তন করা হয়। তিনি বেতন থেকে বার্ষিক 12% চক্রবৃদ্ধি মুনাফা হারে বছর শেষে একটি ব্যাংকে 12000 টাকা জমা রাখেন। তিনি 2030 সালের 31 ডিসেম্বর চাকুরী থেকে অবসরে যাবেন।

ক) পলাশ সরকারের মূল বেতন কোন ধারাকে সমর্থন করে? ধারাটি লিখ।

খ) ভবিষ্যৎ তহবিল ব্যতিত সে বেতন হিসেবে চাকুরী জীবনে মোট কত টাকা পাবেন।

গ) 2031 সালের 31 ডিসেম্বর ঐ ব্যাংকে মুনাফাসহ তার মোট কত টাকা জমা হবে?

সমাধান :

ক) পলাশ সরকারের মূল বেতন সমান্তর ধারা সমর্থন করে।

ধারাটির প্রথম পদ a = 120000 এবং সাধারণ অন্তর = 5000

দ্বিতীয় পদ = 120000 + 5000 = 125000

তৃতীয় পদ = 125000 + 5000 130000

ধারাটি, 120000 + 125000 130000 + …

খ) 2005 সালের জানুয়ারি থেকে 2030 সালের 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ( 2030 – 2005 + 1) বা, 26 বছর ভবিষ্যৎ তহবিল ব্যতিত তাঁর বেতন বাবদ প্রাপ্য টাকার পরিমাণ

(120000-120000 এর 10%)+(125000-125000 এর 10%) + (130000-130000 এর 10%) + ···

= (120000 – 12000)+(125000 – 12500) + (130000 – 13000) +..

= 108000+112500+ 117000+…

এক্ষেত্রে সৃষ্ট ধারাটি একটি সমান্তর ধারা, যার প্রথম পদ, a = 108000, সাধারণ অন্তর d = 112500 – 108000 = 4500 এবং পদ সংখ্যা n = 26

26 বছরে তাঁর প্রাপ্য মোট বেতনের পরিমাণ  = 26/2 {2x 108000+ (26-1) x 4500} টাকা

= 13(216000+112500) = 13 x 328500 = 4270500 টাকা

গ) 2005 সাল থেকে 2031 পর্যন্ত জমা করার মোট সময় (2031 – 2005) বা 26 বছর

1 12000 টাকার 1 বছর শেষে জমা করেন 12000 ( 1 + 12/100) = 12000 x 1.12 টাকা

12000 টাকার 2 বছর শেষে জমা করেন 12000 × (1.12) 2 টাকা।

12000 টাকার 3 বছর শেষে জমা করেন 12000 × (1.12) 3 টাকা

26 বছরে তাঁর জমাকৃত মোট টাকা 12000 x 1.12 + 12000 (112) 2 + ….. 26 তম পদ পর্যন্ত = 12000{1.12 + ( 1.12 ) 2 + …..+ (1.12)26}

= 12000 x 1.12 x ((1.12)26 – 1) /(1.12 – 1 ) = 12000 x 1.12 x 18.04/0.12

= 2020488 টাকা (প্রায়)

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment