আজকে আমরা আলোচনা করবো চক্র ক্রমিক বহুপদীর উৎপাদকে বিশ্লেষণ । যা উচ্চতর গণিতের বীজগানিতিক রাশি অংশের অন্তর্গত।
চক্র ক্রমিক বহুপদীর উৎপাদকে বিশ্লেষণ
এরূপ রাশিকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করার কোনো ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। সাধারণত, রাশিটির পদগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে উৎপাদক বের করা হয়। অনেক সময় রাশিটিকে কোন একটি চলকের বহুপদী ধরে উৎপাদক উপপাদ্যের সাহায্যে এক বা একাধিক উৎপাদক নির্ণয় করা হয় এবং রাশিটির চক্র-ক্রমিক ও সমমাত্রিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে অপরাপর উৎপাদক নির্ণয় করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, a, b, c চলকের
ক) কোনো চক্র ক্রমিক বহুপদীর (a – b) একটি উৎপাদক হলে, (b – c) এবং (c – a) ও একই চক্র ক্রমিক বহুপদীর উৎপাদক হবে।
খ) এক মাত্রার ও দুই মাত্রার সমমাত্রিক চক্র ক্রমিক বহুপদী যথাক্রমে k (a + b + c) ও k (a2 + b2 + c2) + m (ab + bc + ca) যেখানে k ওm ধ্রুবক।
গ) দুইটি বহুপদী যদি এমন হয় যে, চলকগুলোর সকল মানের জন্য এদের মান সমান হয়, তবে বহুপদী দুইটির অনুরূপ পদ দুইটির সহগ পরস্পর সমান হবে।
উদাহরণ ১৫.
bc(b – c) + calc – a) + ab(a – b) কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান:
এখানে দুইটি পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
প্রথম পদ্ধতি:
bc(b – c) + ca ( c – a) + ab (a – b)
= bc(b-c) + c²a – ca² + a2b – ab²
= bc(b-c) + a2b – ca² – ab² + c²a
= bc(b – c) + a2 (b – c) – a (b2 – c2 )
= bc (b – c) + a2 (b – c) – a (b + c) (b – c)
= (b – c) { bc + a2 – a (b + c)}
= (b-c) {bc + a2 – ab – ac}
= (b – c) {bc – ab – ac + ab }
= (b – c) {b ( c – a) – a (c – a) }
= (b – c) (c – a) (b – a)
= – (a – b) (b – c) (c – a)
দ্বিতীয় পদ্ধতি:
প্রদত্ত রাশিটিকে a এর বহুপদী P(a) ধরে তাতে a এর পরিবর্তে b বসিয়ে দেখি যে,
P (b) = bc (b – c) + cb (c – b) + b2 (b – b) = 0
সুতরাং উৎপাদক উপপাদ্য অনুযায়ী (a – b) প্রদত্ত রাশির একটি উৎপাদক। এখন যেহেতু প্রদত্ত রাশিটি চক্র ক্রমিক রাশি, সেহেতু (b–c) এবং (c – a) উভয়ে প্রদত্ত রাশিটির উৎপাদক।
প্রদত্ত রাশিটি তিন মাত্রার সমমাত্রিক এবং এর তিনটি এক মাত্রার উৎপাদক পাওয়া গেছে। সুতরাং অন্য উৎপাদক যদি থাকে তা ধ্রুবক হবে।
অর্থাৎ, bc(b – c) + ca(c – a) + ab (a – b) = k(a – b) (b – c) (c – a) …… (1)
যেখানে k একটি ধ্রুবক। a, b, c এর সকল মানের জন্য (1) সত্য।
(1) নং এ a = 0, b = 1, c = 2 বসিয়ে পাই,
1.2(-1)=k(-1)(−1)(2) k = -1
bc (b – c) + ca (c-a) + ab (a – b) = – (a – b) (b – c) (c – a)
উদাহরণ ১৬.
a3 (b – c) + b3 (c – a) + 3 (a – b) কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান:
প্রদত্ত রাশিটিকে a এর বহুপদী P(a) বিবেচনা করে তাতে a এর পরিবর্তে ৮ বসিয়ে পাই, P(b) = b3(b – c) + b3 (c – b) + c3(b – b) = 0। সুতরাং উৎপাদক উপপাদ্য অনুযায়ী (a – b) প্রদত্ত রাশির একটি উৎপাদক। এখন যেহেতু প্রদত্ত রাশিটি চক্র ক্রমিক রাশি সেহেতু (b – c) এবং (c – a) উভয়ে প্রদত্ত রাশিটির উৎপাদক। আবার প্রদত্ত রাশিটি চার মাত্রার সমমাত্রিক রাশি
(a – b) (b – c) (c – a) তিন মাত্রার সমমাত্রিক রাশি। সুতরাং প্রদত্ত রাশির অপর উৎপাদকটি অবশ্যই চক্র-ক্রমিক এবং এক মাত্রার সমমাত্রিক রাশি k(a + b + c) হবে, যেখানে k একটি ধ্রুবক।
a3 (b – c) + b3 (c-a) + c3 (a – b) = k(a – b) (b – c) (c – a) (a+b+c) …… (1)
a, b, c এর সকল মানের জন্য (1) সত্য।
সুতরাং (1) নং এ a = 0, b = 1, c = 2 বসিয়ে পাই,
2+8(-1)=k(-1)(−1)(2)(3)
বা k = −1
(1) এ k = − 1 বসিয়ে পাই,
a3 (b – c) + b3 (c – a) + c3 (a – b) = – (a – b) (b – c) (c – a) (a + b + c) ।

উদাহরণ ১৭.
(b + c) (c + a) (a + b) + abc কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান:
রাশিটিকে a এর বহুপদী P(a) ধরে তাতে a এর পরিবর্তে – b – c বসিয়ে পাই,
P(-b–c) = (b+c) (c-b–c) (-b–c+b) + (- b–c) bc = bc (b+c) – bc(b+c) = 0
সুতরাং উৎপাদক উপপাদ্য অনুযায়ী (a + b + c) প্রদত্ত রাশির একটি উৎপাদক। প্রদত্ত রাশিটি তিন মাত্রার সমমাত্রিক চক্র ক্রমিক বহুপদী এবং এর এক মাত্রার একটি উৎপাদক পাওয়া গেছে। সুতরাং অপর উৎপাদক দুই মাত্রার সমমাত্রিক চক্র ক্রমিক বহুপদী হবে, অর্থাৎ k (a2 + b2 + c2)+m ( bc + ca+ab) আকারের হবে, যেখানে k ও m ধ্রুবক ।
(b+c) (c+a)(a+b)+abc = (a+b+c) {k(a2+b2+c2)+m(bc+ca+ab)}… (1)
a, b, c এর সকল মানের জন্য (1) সত্য।
(1) এ প্রথমে a = 0, b = 0, c = 1 এবং পরে a = 1, b = 1, c = 0 বসিয়ে যথাক্রমে পাই,
0 = k এবং 2 = 2 (k x 2 + m )
k = 0, m = 11
এখন k ও m এর মান বসিয়ে পাই, (b+c) (c + a) (a+b)+abc = (a+b+c) (bc+ca+ab)।
মন্তব্য:
উদাহরণ ১৫ এর সমাধানের প্রথম পদ্ধতির অনুরূপ পদ্ধতিতে উদাহরণ ১৬ এবং উদাহরণ ১৭ এ বর্ণিত রাশি দুইটিকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে।
একটি বিশেষ বীজগাণিতিক সূত্র:
a, b, c এর সকল মানের জন্য a3 + b3 + c3 – 3abc = (a + b + c) (a2 + b2 + c2 – ab – bc– ca)
প্রমাণ:
এখানে দুইটি পদ্ধতিতে প্রমাণ দেখানো হয়েছে।
প্রথম পদ্ধতি (সরাসরি বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে
a3 + b3 + c3 – 3abc
= (a + b) 3 – 3ab (a + b) + c3 – 3abc
= (a + b) 3 + c3 – 3ab (a + b + c)
= (a + b + c) { (a + b) 2 – (a + bc + c2 } – 3ab (a + b + c)
= (a+b+c)(a²+2ab+b² – ac-bc+c²) – 3ab(a+b+c)
= (a+b+c) (a² + b² + c² – ab- bc – ca)
দ্বিতীয় পদ্ধতি (সমমাত্রিক চক্র ক্রমিক বহুপদীর ধারণা ব্যবহার করে)
a3 + b3 + c3 – 3abc রাশিটিকে a চলকের বহুপদী P(a) ধরে a = – (b + c) বসিয়ে পাই,
P{-(b+c)} = – (b+c)³ + b³ + c³ +3(b+c)bc = (b+c)³ – (b+c)3 = 0
সুতরাং a + b + c বিবেচনাধীন রাশিটির একটি উৎপাদক। যেহেতু a3 + b3 + c3 – 3abc তিন মাত্রার সমমাত্রিক চক্র ক্রমিক বহুপদী, সুতরাং রাশিটির অপর উৎপাদক k(a2 + b2 + c2) + m (ab+bc+ca) আকারের হবে, যেখানে k ওm ধ্রুবক । অতএব, সকল a, b ও c এর জন্য
a³+b3+c³-3abc = (a+b+c){k (a² + b² + c²)+m(ab+be+ca)}
এখানে প্রথমে a = 1, b = 0, c = 0 ও পরে a = 1, b = 1, c = 0 বসিয়ে পাই, k =1 এবং 2 = 2(k x 2 + m) অর্থাৎ k = 1 এবং 1 = 2 +m ⇒ m = -1
a³+b³ + c³ – 3abc = (a+b+c) (a² + b² + c² – ab – bc — ca)
অনুসিদ্ধান্ত ১.
a³ +63 + c³ – 3abc = 1/2(a + b + c) { (a − b)² + (b − c)² + (c − a)²}
প্রমাণ:
a²+b²+c²-ab-bc- ca
= 1/2(2a² + 2b² + 2c² – 2ab – 2bc – 2ca)
= 1/2{(a² – 2ab+b²) + (b² – 2bc + c²) + (c² – 2ca + a²)}
= 1/2{(a – b)² + (b − c)² + (c− a)²}
a³+b3+c³-3abc = 1/2(a+b+c) {(a – b)² + (b −c)² + (c-a)²}
অনুসিদ্ধান্ত ২.
যদি a + b + c = 0 হয়, তবে a3 + b3 + c3 = 3abc
অনুসিদ্ধান্ত ৩.
যদি a3 + b3 + c3 – 3abc হয়, তবে a + b + c = 0 অথবা a = b = c
উদাহরণ ১৮.
(a – b)3 + (b – c) 3 + (c – a) 3 কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান:
A = a -b, B = b – c, C = c – a
OR, A + B + C = a – b + b – c + c – a = 0
সুতরাং, A3 + B3 + C3 = 3ABC
অর্থাৎ, (a – b)3 + (b − c)³ + (c − a)³ = 3(a – b)(b − c) (ca)
আরও দেখুনঃ
3 thoughts on “চক্র ক্রমিক বহুপদীর উৎপাদকে বিশ্লেষণ”