আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ জ্যামিতিক আকৃতি গঠন । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের আকৃতি দিয়ে যায় চেনার অন্তর্গত।
জ্যামিতিক আকৃতি গঠন
আমরা জ্যামিতিক বিভিন্ন আকার আকৃতি কাগজের সঠিক ভাঁজের মাধ্যমে তৈরি করতে পারি। আমাদের সবার প্রথমেই লাগবে একটি কাগজ।
কাজ ১।
আমরা একটি (A4) কাগজ নিয়ে মাঝ বরাবর ভাঁজ করি। ভাঁজ করা কাগজটিকে আড়াআড়ি করে আবার ভাঁজ করি।
প্রতিটি ভাঁজ বরাবর আমরা একটি করে রেখা (line) আঁকি। রেখার মিলিত বিন্দুতে (point) চারটি কোণ (angle) তৈরি হয়েছে। চারটি কোণই পরিমাপ করে দেখো। তারা সবাই সবার সমান। আমরা সমানভাবে আড়াআড়ি ভাঁজ করে এই কোণগুলো তৈরি করেছি। তাই এদের প্রত্যেকটিকে আমরা এক সমকোণ (right angle) বলবো।
চিন্তা করে দেখো, ভাঁজগুলো যদি সমান না হয় তাহলে কী হবে? কোণগুলোও সমান হবে না। অর্থাৎ আমরা সমকোণ পাবো না। দুইটি রেখা ছেদ করে যদি সমকোণ তৈরি হয় তবে রেখা দুইটিকে পরস্পর লম্ব (perpendicular) বলা হয়।
কাজ ২।
ধরো একটি রেখাংশ AB দেয়া আছে। আমরা AB তে অবস্থিত একটি বিন্দুতে একটি লম্ব আঁকতে চাই। ধরে নিচ্ছি P হচ্ছে সেই বিন্দু যার উপরে আমরা লম্বটি আঁকবো। AB রেখা আঁকা কাগজটিকে আমরা চিত্রের মত এমনভাবে ভাঁজ করি যেন ভাঁজটি ঠিক P বিন্দুতে থাকে এবং AB রেখার একটি অংশ অপর অংশের উপরে একদম বরাবর গিয়ে পড়ে।
এই ভাঁজ বরাবর একটি রেখা আঁকো। এবারে তোমরা সেই রেখাটির সাথে AB এর কোণ পরিমাপ করে দেখো। আমরা যদি AB এর এক অংশকে আরেক অংশের বরাবর না রেখে ভাঁজটি করি তখন কোণের পরিমাপ কেমন হবে? পরীক্ষা করে দেখে ক্লাসের সবার সাথে আলোচনা করো।
আমরা জ্যামিতি বক্সের ত্রিকোণী (set squares) ব্যবহার করেও লম্ব আঁকতে পারি। প্রথমে AB সরলরেখাটির ওপর একটি বিন্দু P নিই। AB রেখা বরাবর রুলারের একটি ধার স্থাপন করি এবং খাড়াভাবে ধরে রাখি। রুলার বরাবর ত্রিকোণীর একটি ধার এমনভাবে বসাই যেন এক সমকোণ সংলগ্ন কৌণিক বিন্দুটি P বিন্দুর সাথে মিলে যায়। ত্রিকোণীটি খাড়াভাবে ধরে রেখে PQ রেখাংশ আঁকি। লক্ষ করো, , ত্রিকোণীতে যেহেতু আগে থেকেই একটি সমকোণ তৈরি করা থাকে, আমরা সহজেই সেই সমকোণটির মত করে আরেকটি সমকোণ এঁকে নিচ্ছি।
কাজ ৩।
ধরো তোমাদেরকে একটি রেখাংশ AB দিয়ে বলা হলো সেটির সমান করে আরেকটি রেখাংশ আঁকতে। তোমরা হয়তোবা চিন্তা করবে যে স্কেল দিয়ে দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে সেই সমান পরিমাপের আরেকটি রেখাংশ এঁকে ফেলা। কিন্তু যদি আমাদের AB রেখাংশটির দৈর্ঘ্য ভগ্নাংশ এককে থাকে তাহলে সমান পরিমাপ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তাই চলো আমরা আরেকটি পদ্ধতি দিয়ে চেষ্টা করি। এক টুকরা সুতা নাও। তারপর প্রদত্ত রেখাংশের এক বিন্দুতে সুতার একটি মাথা বসাও এবং টানটান করে সুতাটি ধরে অপর বিন্দুর সমান করে সুতাটি কেটে নাও। তারপর সুতাটিকে টানটান করে কাগজে বসিয়ে দুইটি বিন্দু চিহ্নিত করো। এবারে স্কেলের সাহায্যে দুইটি বিন্দু যোগ করলেই তোমরা AB এর সমান করে আরেকটি রেখাংশ পেয়ে যাবে।
কাজ ৪।
একটি কাগজে একটি রেখাংশ AB রেখাংশ আঁকা আছে। রেখাংশের দুই শীর্ষের বিন্দু যদি হয় A ও B তাহলে আমরা A কে B এর উপরে নিয়ে চেপে ধরবো এক হাত দিয়ে এবং অন্য হাত দিয়ে আমরা কাগজের যে ভাঁজ তৈরি হবে সেটিকে সমান করে দিবো। লক্ষ করে দেখো, ভাঁজ বরাবর আমরা যদি একটি দাগ টানি সেটি একটি সরলরেখা হচ্ছে। একটি স্কেল দিয়ে পরিমাপ করলেই দেখতে পারবে যে ভাঁজের যেকোনো বিন্দু থেকে A ও B দুই বিন্দুর দূরত্বই সমান। অর্থাৎ আমরা AB রেখাংশটিকে সমান দুই ভাগে ভাগ করতে পারলাম।
পরীক্ষা করে দেখো যে A ও B বিন্দুগুলো একদম একটিকে আরেকটির উপরে না চেপে ধরে একটু আশেপাশে চেপে ধরলে ভাঁজ থেকে বিন্দুগুলোর দূরত্ব কীভাবে পরিবর্তন হয়? তোমার চিন্তাটি খাতায় লিখে রাখো।
AB ও CD এর মাঝে তৈরি হওয়া কোণ পরিমাপ করে দেখো। এই রেখা দুইটির মাঝে আমরা কোণের পরিমাপ অনুযায়ী তাদেরকে লম্ব বলতে পারি কি? তাহলে আমরা CD কে AB রেখাংশটির লম্ব সমদ্বিখণ্ডক (perpendicular bisector) বলবো।
কাজ ৫।
মনে করি, আমাদেরকে একটি রেখা AB দিয়ে বলা হলো এর বাইরের একটি বিন্দু P থেকে AB এর উপরে একটি লম্ব আঁকতে। আমরা কাজ ১ এ শিখেছি কীভাবে লম্ব পাওয়া যায় এবং কাজ ৪ এ শিখেছি কীভাবে একটি রেখার লম্ব সমদ্বিখণ্ডক পেতে পারি। আমরা AB রেখাটিকে এমনভাবে ভাঁজ করবো যেন ভাঁজের দুইপাশের অংশ একটি আরেকটির সাথে মিলে যায়। কিন্তু এবারে যেহেতু আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু P এর কথা বলে দেয়া হয়েছে, আমরা ভাঁজটি এমনভাবে করবো যেন P বিন্দুটিও ভাঁজের মাঝে থাকে।
এবারে ভাঁজ বরাবর যদি আমরা CD রেখাংশ আঁকি তাহলেই দেখতে পাবো যে সেটি আমাদের নির্দিষ্ট বিন্দু P বরাবর গিয়েছে। AB ও CD এর মাঝে কোণগুলো পরিমাপ করে কোণের মান খাতায় লিখো। দেখবে যে সবকয়টি কোণই সমকোণ হয়েছে।
কাজ ৬।
আমরা একটি কাগজে একটি কোণ ABC নিই যার শীর্ষবিন্দু হচ্ছে B। এবারে আমরা কাগজটিকে ঠিক AB বরাবর ভাঁজ করি। BC রেখাটি কাগজের যে অংশের সাথে মিলে যায় সেখানে আমরা একটি রেখাংশ এঁকে নিই।
এবারে কোণ ABC ও কোণ ABD কে পরিমাপ করে তাদের তুলনা করে দেখো। দেখতে পাবে যে তাদের পরিমাপ সমান। অর্থাৎ আমরা কোণ ABC এর সমান করে নতুন আরেকটি কোণ আঁকতে পারলাম।
কাজ ৭।
আমরা একটি কাগজে একটি কোণ ABC নিই যার শীর্ষবিন্দু হচ্ছে B। এবারে আমরা কাগজটিকে এমনভাবে ভাঁজ করি যেন AB ও BC বাহুগুলো একে অপরের সাথে মিলে যায়। লক্ষ করে দেখ ভাঁজটি শীর্ষবিন্দুকেই ছেদ করেছে। এবারে ভাঁজ বরাবর একটি রেখা আঁকলে দেখতে পাবে যে দুইটি কোণ পাওয়া গেছে।
কোণ দুইটি পরিমাপ করে দেখো। তারা পরস্পর সমান এবং প্রত্যেকেই কোণ ABC এর অর্ধেক। কাজ ৬ থেকে আমরা এটা বলতে পারি। কারণ সেখানে আমরা নতুন কোণটির বাহু পুরাতন কোণের বরাবর করেই নিয়েছিলাম। আবার লক্ষ করো, ভাঁজ বরাবর রেখাটি থেকে কোণের বাহুগুলো এক সমান দূরত্ব বজায় রেখেছে। অর্থাৎ আমরা যদি একটি কোণের মাঝে দিয়ে একটি রেখাংশ আঁকতে পারি যা কোণের দুই বাহু থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখে তাহলেই আমরা কোণের সমদ্বিখণ্ডক পেয়ে যাচ্ছি
চিত্রটি লক্ষ করো, পরস্পর ছেদ করা রেখা জোড়ার ছেদবিন্দুর দিকে তাকাও। AB ও CD দুইটি সরলরেখা যারা পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করেছে। এর ফলে সেখানে দুইজোড়া কোণ তৈরি হয়েছে যারা পরস্পর বিপরীতমুখী। এই দুইজোড়ার প্রতিজোড়াকে আমরা বলবো বিপ্রতীপ কোণ (vertically opposite angle)। এদের প্রত্যেকের শীর্ষবিন্দু O।
তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগার কথা, আমরা বিপরীত বলছি না কেন, সেটাই তো বলা সহজ। এবারে পরের চিত্রটি লক্ষ করো। ১ চিহ্ন দেয়া কোণ আর ২ চিহ্ন দেয়া কোণ দুইটিরও একই শীর্ষবিন্দু, কিন্তু ১ কোণটির বাহুগুলোকে বিপরীত দিকে বাড়ালে আমরা ২ কোণটিকে পাই না। এখানে তারা শুধুই বিপরীত কোণ। বিপ্রতীপ হবে তখনই, যখন একটি কোণের বাহুগুলোকে বিপরীতে বৃদ্ধি করলে আরেকটিকে পাওয়া যায়।
কাজ ৮।
এবারে একটি কাগজ নিই যেখানে AB ও CD দুইটি সরলরেখা আঁকা যারা পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করেছে। তারপর O বিন্দু বরাবর এমনভাবে ভাঁজ করি যেন BO এবং CO অংশগুলো একে অপরের সাথে মিলে যায়। AO এবং DO এর অবস্থান লক্ষ করো। তারা কি মিলে গিয়েছে? এখান থেকে আমরা বিপ্রতীপ কোণের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারি?
কাজেই আমরা বলতে পারি যে দুইটি রেখা পরস্পরকে ছেদ করলে উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণগুলো পরস্পর সমান হয়।
তিনটি কাঠির খেলা
দুইটি কাঠি নাও। সঙ্গে কাঠি না থাকলে তোমরা কলম/পেন্সিল দিয়ে কাজটি করতে পারো। ছবির মত বিভিন্নভাবে বসালেই দেখতে পারবে যে দুইটি লম্বা কাঠি একটি আরেকটিকে কেবলমাত্র একটি বিন্দুতেই ছেদ করতে পারবে। তোমরা পূর্বের শ্রেণিতেই জেনে এসেছো যে যদি তারা কখনোই ছেদ না করে তবে তাদেরকে বলা হবে সমান্তরাল (parallel)।
এবারে আমরা তৃতীয় আরেকটি কাঠি নিয়ে আসি। প্রথম কাঠি দুইটি যদি সমান্তরাল হয়, তাহলে তৃতীয় কাঠিটি বসানোর জন্য দুইটি উপায় দেখা যাবে।
১। তৃতীয় কাঠিটি হবে প্রথম দুইটার সমান্তরাল [ছবি ১] অথবা,
২। তৃতীয় কাঠিটি কারো সাথেই সমান্তরাল হবে না এবং দুইটি রেখাকেই একটি করে বিন্দুতে ছেদ করবে
প্রথম দুইটা কাঠি যদি সমান্তরাল না হয়, তাহলেও তৃতীয় কাঠিটি দুইটি উপায়ে বসতে পারে।
৩। প্রথম দুইটি কাঠির ছেদবিন্দুতেই তৃতীয় কাঠিটি ছেদ করবে। [ছবি ৩]
৪। তৃতীয় কাঠিটি প্রথম দুইটি কাঠিকে দুইটি আলাদা বিন্দুতে ছেদ করবে। [ছবি ৪]
৩ নাম্বার ছবির মত, দুইয়ের অধিক রেখা যদি একই বিন্দুতে ছেদ করে, তাদেরকে আমরা বলি সমবিন্দু রেখা (concurrent line)। ২ ও ৪ নাম্বার ছবির মত, একটি রেখা যদি আরো একাধিক রেখাকে ছেদ করে, তাহলে আমরা সেই রেখাটিকে বলবো ছেদক (transversal)।
নিচের ছবি ৫ ও ৬ লক্ষ করো, দুইটি রেখার সাথে অপর একটি ছেদ করলে এইরকম আটটি করে কোণ তৈরি হয়।
একটু খেয়াল করলে দেখবে ১ ও ৫, ২ ও ৬, ৩ ও ৭ এবং ৪ ও ৮ এই কোণের জোড়াগুলোর অবস্থান একইরকম। তারা রেখার উপরে অথবা নিচে এবং ছেদকের ডানে অথবা বামে। যেমন ১ ও ৫ জোড়াটি রেখার উপরে এবং ছেদকের বামে। এমন জোড়ার কোণ দুইটিকে অনুরূপ কোণ (corresponding angles) বলা হবে।
চিত্রগুলোর দিকে আবার তাকালে দেখবে ১ ও ৭, ২ ও ৮, ৩ ও ৫ এবং ৪ ও ৬ এই জোড়াগুলোর অবস্থান মোটামুটি বিপরীতমুখী। একটি যদি হয় ডানে এবং উপরে(৬ নম্বর কোণ) অপরটি তাহলে হচ্ছে বামে এবং নিচে(৪ নম্বর কোণ)। এমন কোণের জোড়াকে আমরা বলবো একান্তর কোণ (alternate angles ) ।
আবার দেখো, ১, ২, ৭ ও ৮ কোণগুলো বাইরের দিকে আবার ৩, ৪, ৫ ও ৬ কোণগুলি ভেতরের দিকে। বাইরের দিকের কোণগুলো বহিঃস্থ কোণ (exterior angles) আর ভেতরেরগুলো অন্তঃস্থ কোণ (interior angles)
এবারে চলো আমরা কোণগুলোর মাঝে কিছু সম্পর্ক বের করার চেষ্টা করে দেখি।
১। কাগজটিকে চিত্রে দেখানো উপায়ে দুইটি ভাঁজ করে নাও যেন তারা সমান্তরাল হয়। প্রয়োজনে শিক্ষকের সাহায্য নাও সমান্তরাল ভাঁজ করতে। তারপর সেই ভাঁজ দুইটি বরাবর দুইটি রেখা আঁকো। তোমরা তাহলে দুইটি সমান্তরাল সরলরেখা পাবে।
২। এবারে চিত্রের মত কাগজটির মাঝের দিকে আড়াআড়ি একটি ভাঁজ দাও। সেই ভাঁজ বরাবর দাগ টানলেই তোমরা সমান্তরাল রেখা দুইটির জন্য একটি ছেদক পেয়ে যাবে।
৩। কাগজের দুই পাশেই ভাঁজ বরাবর দাগ দিয়ে নিচের ছবির মত কোণগুলোকে সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করো। এক পাশে চিহ্নিত করবে চিত্র ৬ এর মত, এবং উল্টোপাশে এমনভাবে সংখ্যা লিখবে যেন ১ এর বিপরীতপাশের কোণটিও ১ হয়।
৪। এবারে ২ নাম্বার কোণটি দেখানো চিত্রের মত কেটে আলাদা করে নাও। ৬ নাম্বার কোণের সাথে ২ নাম্বার কোণটি মিলিয়ে দেখো চিত্রের মত। আমরা এখান থেকে বলতে পারি কোণ ২ আর কোণ ৬ পরস্পর সমান। অর্থাৎ দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করার ফলে অনুরূপ দুইটি কোণ পরস্পর সমান হয়েছে। নিজেরা পরীক্ষা করে দেখো তো এইটিকে আর কোন কোণের উপরে পুরোপুরি বসাতে পারো?
৫। এবারে চিত্রে দেখানো উপায়ে ৫ নাম্বার কোণটিকেও আলাদা করে নাও।
৬। ৫ নাম্বার কোণটি ৩ নাম্বার কোণের সাথে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। আমরা জানি তারা পরস্পর একান্তর কোণ। কাজেই আমরা বলতে পারি, দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করার ফলে একান্তর দুইটি কোণ পরস্পর সমান হয়েছে।
আবার কোণ ৫ যেহেতু কোণ ১ এর অনুরূপ, তারা অবশ্যই মিলে যাবে। খেয়াল করো, কোণ ৫ আর কোণ ৪ যোগ করে আমরা একটি সরলকোণ বা দুই সমকোণের সমান পাচ্ছি। কোণ ৪ ও ৫ ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণ। আমরা এটা বলতে পারি যে, দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করার ফলে ছেদকের একই পাশের দুইটি অন্তঃস্থ কোণের যোগফল দুই সমকোণের সমান হয়েছে।
দলগত কাজটি থেকে আমরা দুইটি সমান্তরাল রেখা ও তাদের ছেদক সম্পর্কে নিচের তথ্যগুলো জানতে পারলাম, যা আমরা পরবর্তীতে সমস্যা সমাধান করতে ব্যবহার করতে পারবো।
১। দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করালে অনুরূপ কোণেরা পরস্পর সমান হয়। এখানে কোণ ১ ও ৫, কোণ ২ ও ৬, কোণ ৩ ও ৭ এবং কোণ ৪ ও ৮ পরস্পর অনুরূপ এবং সমান ।
২। দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করালে একান্তর কোণেরা পরস্পর সমান হয়। এখানে কোণ ৩ ও ৫ এবং কোণ ৪ ও ৬ পরস্পর একান্তর এবং সমান।
৩। দুইটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করালে ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপের যোগফল দুই সমকোণের সমান হয়। এখানে কোণ ৩ ও ৬ এবং কোণ ৪ ও ৫ এই দুইটি ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণের জোড়া রয়েছে যাদের যোগফল দুই সমকোণের সমান।
এবারে চলো আমরা পরীক্ষা করে দেখি ছেদকের সাথে উৎপন্ন কোণেদের কোন সম্পর্ক পাওয়া গেলে দুইটি রেখা সমান্তরাল হয় কি না।
একক কাজ:
একটি রেখার দুইটি বিন্দুতে একই দিকে ৫০° মাপের কোণ আঁকো নিচের চিত্রের মত। এরপরে EF ও GH রেখা দুইটির দূরত্ব পরিমাপ করে দেখো।
কাজের ফলাফল পর্যালোচনা করে আমরা নিচের সিদ্ধান্তে A আসতে পারি।
১। দুইটি রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করলে যদি অনুরূপ কোণেরা পরস্পর সমান হয়, তবে ওই রেখা দুইটি পরস্পর
সমান্তরাল।
২। দুইটি রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করলে যদি একান্তর কোণেরা পরস্পর সমান হয়, তবে ওই রেখা দুইটি পরস্পর সমান্তরাল।
৩। দুইটি রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করলে যদি একই পাশের অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপের যোগফল দুই সমকোণের সমান কোণেরা পরস্পর সমান হয়, তবে ওই রেখা দুইটি পরস্পর সমান্তরাল।

আরও দেখুনঃ