ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের আকৃতি দিয়ে যায় চেনার অন্তর্গত।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

এই অধ্যায়ে আমরা তিনটি কাঠি দিয়ে একটি ক্ষেত্রকে আবদ্ধ করবো এবং এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো। তোমরা পূর্বের শ্রেণিতেই জেনেছ যে, তিনটি রেখাংশ দিয়ে যে ক্ষেত্রটিকে আবদ্ধ করা হয় তাকেই ত্রিভুজক্ষেত্র বলে এবং সেই ক্ষেত্রের সীমারেখাকে বলা হয় ত্রিভুজ (triangle)। এই অধ্যায় জুড়ে আমরা তিনটি কাঠিকে তিনটি রেখাংশ হিসেবে ধরে নিবো এবং বিভিন্ন প্রকার ত্রিভুজ তৈরি করবো। তারপর তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে খুঁজে বের করবো এবং সেই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রয়োগ করতে চেষ্টা করবো।

ত্রিভুজের তিন বাহু

আমরা জানি, যে তিনটি রেখাংশ ক্ষেত্রটিকে আবদ্ধ করে তাদেরকে বলা হয় ত্রিভুজের বাহু (side)। বাহুগুলো একে অপরকে যে বিন্দুতে ছেদ করে তাদেরকে আমরা বলি শীর্ষ (vertex)। পূর্বের ক্লাসের নির্দেশনা অনুযায়ী তোমরা নিশ্চয়ই তিনটি করে কাঠি সংগ্রহ করেছ? এবারে চলো আমরা তাদেরকে পরিমাপ করে ত্রিভুজ গঠন করার চেষ্টা করি।

প্রথমে তোমরা নিচের ছকে তোমাদের হাতের কাঠিগুলোর দৈর্ঘ্য পরিমাপ বসাও। তারপর চেষ্টা করে দেখ তাদেরকে বসিয়ে তোমরা ত্রিভুজ গঠন করতে পারো কি না।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

এবারে প্রতিটি ক্রমে কাঠিগুলোর পরিমাপের সম্পর্ক বসাও এবং ত্রিভুজ গঠন করা গিয়েছে কি না তা খেয়াল করো।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

ত্রিভুজের মধ্যমা, কোণের সমদ্বিখন্ডক এবং বিপরীত বাহুর উপরে আঁকা লম্ব

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

নিচের চিত্রের মত কাগজের ত্রিভুজ তৈরি করে কেটে নাও। এবারে আমরা ত্রিভুজের ভেতরের বিভিন্ন রেখা সম্পর্কে জানবো।

 

মধ্যমাঃ

‘মধ্যমা’ শব্দটি খেয়াল করলেই তোমরা দেখতে পাবে যে এখানে ‘মধ্য’ অংশটি আছে। কাজেই এই রেখাটি কিছু একটার মাঝখানে আছে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আমরা আগে মধ্যমা তৈরি করি।

১। নিচের চিত্রের মত ত্রিভুজের একটি শীর্ষকে আরেকটি শীর্ষের সাথে মেলাও। মাঝের ভাঁজ পড়া বিন্দুটি খেয়াল করো। সেখান থেকে এই দুইটি শীর্ষবিন্দুর দূরত্ব কেমন হবে তা পরিমাপ করে দেখো। দূরত্ব যেহেতু সমান হয়, আমরা বলতে পারি যে ভাঁজ পড়া বিন্দুটিই হবে দুই শীর্ষের মাঝের বাহুটির মধ্যবিন্দু।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

২। এভাবে তিনটি বাহুরই মধ্যবিন্দু বের করো এবং বিপরীত শীর্ষবিন্দুর সাথে ভাঁজ করে যোগ করে নাও। শীর্ষবিন্দুর সাথে যেহেতু আমরা বাহুর মধ্যবিন্দু যোগ করছি, আমরা এই রেখাগুলো সেজন্যে বলি মধ্যমা। নিচের চিত্রে ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা এঁকে দেখানো হলো।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

তোমরা এমনিতে রুলারের সাহায্যে মধ্যবিন্দু বের করে সেটিকে বিপরীত শীর্ষের সাথে যোগ করে মধ্যমা আঁকতে পারো।

দলগত কাজ:

চার-পাঁচজন করে শিক্ষার্থীর দল গঠন করো। একটি আর্ট পেপার জাতীয় কাগজ অথবা একটি পাতলা বোর্ড থেকে ত্রিভুজ আকৃতির একটি অংশ কেটে নাও। তারপর একটি রুলারের সাহায্যে প্রতি বাহুর মধ্যবিন্দু বের করো এবং সেগুলো ব্যবহার করে তিনটি মধ্যমা আঁকো। লক্ষ করে দেখো, ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমার একটি মজার বৈশিষ্ট্য আছে। যেকোনো ত্রিভুজের তিনটি মধ্যমা সবসময় একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে ছেদ করে। এবারে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে মধ্যমাদের ছেদবিন্দুতে একটি সুতা বেঁধে নাও। এবারে সুতা দিয়ে ত্রিভুজটিকে ঝুলিয়ে দাও, কী দেখতে পাচ্ছ? ত্রিভুজটি মাটির সাথে সমান্তরাল হয়ে ঝুলে থাকছে। আবার তোমরা যদি ত্রিভুজটিকে শক্ত কাগজ দিয়ে তৈরি করে থাকো, একটি কলম বা পেন্সিল মধ্যমাদের ছেদবিন্দুতে গেঁথে নাও। দেখবে যে ত্রিভুজটি কোনদিকে বেঁকে যাচ্ছে না।

যেহেতু এই বিন্দুর মাধ্যমেই আমরা পুরো ত্রিভুজটিকে ধরে রাখতে পারি, আমরা বলতে পারি যে ত্রিভুজের ওজন এই বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। অর্থাৎ ত্রিভুজের ভরের কেন্দ্র হচ্ছে এই বিন্দু। এইজন্য এই বিন্দুটিকে আমরা বলবো ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র।

 

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

কোণের সমদ্বিখণ্ডকঃ

নাম দেখেই তোমরা বুঝতে পারছ যে এই রেখাটি ত্রিভুজের কোণকে সমান দুই ভাগে ভাগ করবে। চলো আমরা দেখি কাগজের ত্রিভুজ থেকে কীভাবে কোণের সমদ্বিখণ্ডক বের করা যায়।

১। নিচের চিত্রের মত ত্রিভুজের শীর্ষকে এক পাশে রেখে ভাঁজ করো যেন একটি বাহু আরেকটি বাহুর উপরে মিলে যায়। দেখবে মাঝের শীর্ষবিন্দু বরাবর একটি ভাঁজ তৈরি হয়েছে। এবারে শীর্ষবিন্দুতে তৈরি হওয়া কোণ দুইটি পরিমাপ করে দেখো তাদের মাঝে কোন মিল আছে কি না।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

২। পরিমাপ করে বুঝতে পারবে সেই ভাঁজটি শীর্ষবিন্দুতে থাকা অন্তঃস্থ কোণটিকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে।

লক্ষ করলে বুঝতে পারবে, মধ্যমাদের মত কোণের সমদ্বিখণ্ডকেরাও নিজেদের ছেদ করার জন্য একটি বিন্দু আলাদা করে রেখেছে। অর্থাৎ ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমদ্বিখণ্ডক সবসময় একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে ছেদ করে।

 

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

বিপরীত বাহুর উপর লম্বঃ

কোন শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুর উপরে আঁকা লম্বগুলোও ত্রিভুজের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। নিচের ধাপ অনুসরণ করে এসো আমরা তিনটি শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুর উপরে লম্ব আঁকার পদ্ধতি দেখে নিই।

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

১। নিচের চিত্রের মত একটি শীর্ষকে লম্বালম্বি এমনভাবে ভাঁজ করবে যেন বিপরীত বাহুটি নিজের সাথে মিশেই থাকে এবং এক পাশ থেকে দেখতে এদেরকে সমকোণী ত্রিভুজের মত মনে হয়। যে বিন্দুতে ভাঁজ করা হলো সেখানকার কোণটির পরিমাপ কী?

 

ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য

 

২। পরিমাপ করলেই বুঝতে পারবে যে এই ভাঁজ বরাবর আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লম্ব পাচ্ছি। এভাবে তিনটি লম্বকেই আমরা বের করে নিবো এবং আঁকার পরে নিচের চিত্রের মত দেখা যাবে।

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment