আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ত্রৈরাশিকের গল্প । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের অনুপাত ও সমানুপাত এর অন্তর্গত।
ত্রৈরাশিকের গল্প
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়কপথের আনুমানিক দুরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। একটি বাস সকাল সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২ টায় চট্টগ্রাম পৌছে। প্রতি ঘণ্টায় বাসটি ঢাকা থেকে কতদূর অতিক্রম করে সেটির একটি ছক নিম্নে দেয়া আছে। উল্লেখ্য যে প্রতি ঘণ্টায় বাসটির অতিক্রান্ত দূরত্ব, সময়ের সাপেক্ষে সমানুপাতিক। তোমরা ছকটি দেখো।
এখন দেখো, বাসটি ২ ঘণ্টা শেষে কতদূর অতিক্রম করতে পারে, সেটি আমাদের অজানা। সেটি ৫০ থেকে ১৫০ এর মাঝে যেকোনো কিছু হতে পারে। কিন্তু উপরে দেখো, বলা আছে প্রতি ঘণ্টায় বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্ব সময়ের সাপেক্ষে সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, যদি সময় ও দুরত্বের অনুপাত নেয়া হয়ে, তাহলে প্রতি ঘণ্টায় এটি সমান হবে। তাহলে এখন দেখা যাক বাসটি প্রথম ঘণ্টায় অতিক্রম করে ৫০ কিলোমিটার। অর্থাৎ, সময় ও দুরত্বের অনুপাত হল ১:৫০। এখন আমরা ২ ঘণ্টা শেষে অতিক্রান্ত দুরত্ব কত, সেটি নির্ণয় করতে চাই। ধরে নিই, ২য় ঘণ্টা শেষে অতিক্রান্ত দুরত্ব হল ক। তাহলে অনুপাতটি হবে ২:ক। এখন দেখো বলা আছে অনুপাত দুটি সমানুপাতে আছে। অর্থাৎ সমান।
তাহলে আমরা বলতে পারব, ১:৫০ = ২ :ক
এখান থেকে ভগ্নাংশ আকারে আমরা পাই ১/৫০ = ২/ক
এখান থেকে আমরা পাই, ১ × ক = ২ × ৫০
অর্থাৎ, ক = ১০০।
এখন, দেখো তো আমরা যখন ১ × ক = 2 × ৫০ আকারের গুণটি করেছি, আমরা আসলে কি করেছি? একটি নিচে দেখো। যদি আমরা ধরি ক:খ এবং গ:ঘ সমানুপাতে রয়েছে, তাহলে আমরা বলতে পারি
ক:খ = গ:ঘ
ভগ্নাংশ আকারে আমরা পাই ক/খ = গ/ঘ । এবং পূর্বের উদাহরণের মত গুণ করলে পাই ক × ঘ = গ × খ। এখন সমানুপাত থেকে আমরা কি শিখেছি, এই সমানুপাতে ক হল ১ম রাশি, খ হল ২য় রাশি, গ হল ৩য় রাশি এবং ঘ হল ৪র্থ রাশি।
অর্থাৎ, যেকোনো সমানুপাতে ১ম রাশি x ৪র্থ রাশি = ২য় রাশি x ৩য় রাশি
এখন আমরা ২য় ঘন্টা শেষে বাসটির অতিক্রান্ত দুরত্বে নির্ণয় করার সময় দেখো, ৪র্থ রাশি ব্যতীত, বাকি ৩ টি রাশির মানই জানতাম। পরে সেই ৩ টি মানের সাহায্যে আমরা ৪র্থ রাশির মান নির্ণয় করেছি।
এবার নিচের বিষয়টি লক্ষ্য করো। তোমাকে বলা হয়েছে, কোন সমানুপাতের ১ম, ৩য় ও ৪র্থ রাশি যথাক্রমে ১৪, ৭ ও ২২ হয়। তাহলে ২য় পদটি নির্ণয় করতে হবে।

এখন আমরা ধরি ২য় পদটি হল ক। তাহলে, পূর্বে শিখে আসা ধারণা থেকে আমরা বলতে পারব, সমানুপাতটি
হল ১৪ : ক = ৭ : ২২।
অর্থাৎ, ১৪ × ২২ = ৭ × ক
অথবা, ক =১৪ × ২২/৭ = 88
অর্থাৎ, এই সমানুপাতে ২য় রাশি হল ৪৪।
এখান থেকে কি বোঝা যায় বলো তো? কোন সমানুপাতে যদি ১ম রাশি, ২য় রাশি, ৩য় রাশি এবং ৪র্থ রাশির মাঝে যেকোনো তিনটি রাশি জানা থাকে তাহলে আমরা অজানা রাশি নির্ণয় করতে পারব।
এভাবে সমানুপাতের তিনটি রাশি জানা থাকলে অজানা রাশি নির্ণয় করার পদ্ধতিকে ত্রৈরাশিক বলে।
ক্রমিক অনুপাত:
এবার চলো আমরা উপরে রেসিং কারের ছকটি দেখি। এখানে দেখো ১ম মিনিট শেষে গাড়িটি ২ কিলোমিটার অতিক্রম করে এবং দ্বিতীয় কিলোমিটার শেষে গাড়িটি ৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে। এখন চিন্তা করো, মিনিট ও অতিক্রান্ত দুরত্বের সাপেক্ষে অনুপাত দুটি কি হচ্ছে?
১ম মিনিটের জন্য অনুপাতটি ১ : ২ এবং ২য় মিনিটে অনুপাতটি ২ : ৪। এখানে দেখো, এই অনুপাতে মধ্যপদ দুটি কিন্তু একই। তা হল ২। আমরা চিন্তা করলে একটি ক্রমের মত পাই। এরকম সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলা হয় ।
যে সমানুপাতে, অনুপাতের মধ্যপদ দুটি সমান হয়, সেই সমানুপাতটিকে ক্রমিক সমানুপাত বলা হয়।
এবার নিচের উদাহরণটি দেখি। মিশু, আদিত্য ও সবর্না মার্বেল ছোঁড়ার একটি প্রতিযোগিতা করছে। সেখানে তাদের ছোড়া মার্বে যথাক্রমে ৩৫, ২৮ ও ৪৩ মিটার দূরে পৌছালো। এখন মিশু ও সবর্নার মার্বেলের অতিক্রান্ত দুরত্বের অনুপাত ৩৫ : ৪৩। আবার সবর্না ও আদিত্যর মার্বেলের অতিক্রান্ত দুরত্বের অনুপাত ৪৩ : ২৮। অর্থাৎ এই তিনটি রাশি থেকে ৩৫ : ৪৩ ও ৪৩ : ২৮ এই দুইটি অনুপাত নেওযা যায়। এখানে, ৩৫ : ৪৩ :: ৪৩ : ২৮ এ ধরনের সমানুপাতকে ক্রমিক সমানুপাত বলে। অতিক্রান্ত ৩৫, ৪৩ ও ২৮ মিটার, এই রাশি তিনটিকে ক্রমিক সমানুপাতী বলে।
ক আরও একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ক, খ, গ ক্রমিক সমানুপাতী হলে, বা কxগ=(খ)’ =- হবে।
ক্রমিক অনুপাতের ক্ষেত্রে ১ম ও ৩য় রাশির গুণফল ২য় রাশির বর্গের সমান এবং ২য় রাশিকে ১ম ও ৩য় রাশির মধ্য সমানুপাতী বা মধ্য রাশি বলে।
আরও দেখুনঃ