সংখ্যারেখার ধারণা । মাধ্যমিক ৬ষ্ট শ্রেণি গণিত, ২০২৩

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সংখ্যারেখার ধারণা – যা সংখ্যার গল্প এর অন্তর্ভুক্ত। গণিত হল জ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যাতে সংখ্যা, সূত্র এবং সম্পর্কিত কাঠামো, আকার এবং সেগুলির মধ্যে থাকা স্থানগুলি এবং পরিমাণ এবং তাদের পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই বিষয়গুলি যথাক্রমে সংখ্যা তত্ত্বের প্রধান উপশাখা, বীজগণিত, জ্যামিতি,এবং বিশ্লেষণ। তবে একাডেমিক শৃঙ্খলার জন্য একটি সাধারণ সংজ্ঞা সম্পর্কে গণিতবিদদের মধ্যে কোন সাধারণ ঐকমত্য নেই।

সংখ্যারেখার ধারণা

সংখ্যারেখার মাধ্যমে পূর্ণসংখ্যার চার প্রক্রিয়ার ধারণা

  •  একটি সরল রেখা এঁকে তার উপরের যে কোনো বিন্দুকে দ্বারা চিহ্নিত করো।
  • ০ এর ডানদিকে দ্বিতীয় একটি বিন্দুকে ১ দ্বারা চিহ্নিত করো।
  • ০ এবং ১ হিসেবে চিহ্নিত এই বিন্দুগুলোর মধ্যে দূরত্বকে একক দূরত্ব বলা হয়।
  • এবারে এই সরলরেখায় ১ এর ডানদিকে এবং ১ থেকে একক দূরত্বে একটি বিন্দুকে ২ দ্বারা চিহ্নিত করো।
  • এইভাবে সরলরেখায় ৩, ৪, ৫, … হিসেবে ইউনিট দূরত্বে বিন্দু চিহ্নিত করো।
  • এই পদ্ধতিতে তুমি ডানদিকে ০ এবং ০ থেকে বড় সকল পূর্ণ সংখ্যা চিহ্নিত করতে পারবে।

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

এখানে উপরের সংখ্যারেখার ০ এবং তার ডান পাশের অংশ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

এখানে ২ এবং ৪ এর মধ্যে দূরত্ব কত? অবশ্যই এটি ২ একক। তুমি কি ২ এবং ৬ এর মধ্যে, ২ এবং ৭ এর মধ্যে দূরত্ব বলতে পারবে? সংখ্যারেখায় তুমি দেখতে পাবে যে ৭ নম্বরটি ৪ এর ডানদিকে রয়েছে। এই ৭ নম্বরটি ৪ এর চেয়ে বড় অর্থ্যাৎ ৭> ৪।৮ নম্বরটি ৬ এর ডানদিকে রয়েছে এবং ৮ > ৬।

এই পর্যবেক্ষণগুলি আমাদের বলতে সাহায্য করে যে, যে কোনো দুটি পূর্ণ সংখ্যার মধ্যে, ডানদিকের সংখ্যাটি বৃহত্তর সংখ্যা। আমরা আরও বলতে পারি যে, বাম দিকের পূর্ণ সংখ্যাটি ছোট সংখ্যা।

উদাহরণস্বরূপ, ৪< ৯; ৯ এর বাম দিকে ৪ আছে। একইভাবে, ১২ > ৫; ১২ হলো ৫ এর ডানদিকে।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

এবারে তুমি ১০ এবং ২০ সম্পর্কে মতামত দাও।

সংখ্যারেখায় ৩০, ১২, ১৮ চিহ্নিত করো। সবচেয়ে দূরে বাম দিকে কোন সংখ্যা? তুমি কি ১০০৫ এবং ৯৭৫৬ থেকে বলতে পারো, কোন নম্বরটি অন্য নম্বরের তুলনায় ডানদিকে হবে?

সংখ্যারেখায় ১২ এর পরের পূর্ণ সংখ্যা এবং ৭-এর আগের পূর্ণ সংখ্যা চিহ্নিত করো।

সংখ্যারেখায় যোগ

সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার যোগ দেখানো যেতে পারে। ৩ এবং ৪ এর যোগ দেখা যাক।

সংখ্যারেখার ধারণা

 

৩ থেকে শুরু করো। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার সাথে ৪ যোগ করি, তাই ডানদিকে ৪ টি লাফ দাও; ৩ থেকে ৪, ৪ থেকে ৫, ৫ থেকে ৬ এবং ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত (উপরের চিত্রে প্রদর্শিত)। ৪টি লাফের শেষ অবস্থান হবে ৭-এ।
সুতরাং, ৩ এবং ৪ এর যোগফল হবে ৭। অর্থাৎ ৩ + ৪ = ৭

সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৪+৫, ২+৬, ৩ + ৫ এবং ১ + ৬ এই যোগফলগুলি চিহ্নিত করো।

সংখ্যারেখায় বিয়োগ

দুটি পূর্ণ সংখ্যার বিয়োগ ও সংখ্যারেখায় দেখানো যেতে পারে। এসো ৭-৫ বের করি।

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

৭ থেকে শুরু করি। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার ৫ বিয়োগ করব, তাই ইহা বামদিকে ১ টি লাফে ১ একক যাবে। এরূপ ৫টি লাফে ২ বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছবে।

সুতরাং ৭ এবং ৫ এর বিয়োগফল হবে ২। অর্থাৎ ৭-৫=২

সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৮-৩, ৬-২ এবং ১-৬ এই বিয়োগফলগুলি চিহ্নিত করো।

সংখ্যারেখার মাধ্যমে পুণ

এখন সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার গুণ দেখতে পাচ্ছি। সংখ্যারেখা ব্যবহার করে এসো আমরা ৩ × ৪ বের করি।

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

০ থেকে শুরু করো, ডানদিকে একবারে ৩ টি একক লাফ দাও, এইরকম ৪ টি লাফ দিতে হবে।

কোথায় পৌঁছাবে বলো তো? ১২ তে।

তাই, আমরা বলি, ৩ × ৪ = ১২।

সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৬ × ২, ৬ × ৭ এবং ৫ x ৩ এই গুণফলগুলি নির্ণয় করো।

সংখ্যারেখার মাধ্যমে ভাগের ধারণা

সংখ্যারেখায় আমরা যোগ, বিয়োগ ও গুণের ধারণা দেখেছি। এবারে দেখবো ভাগের ধারণা। ভাগ অর্থ ভাজ্য থেকে বারবার করে ভাজককে বিয়োগ করা। এবং সবশেষে আমরা ভাজকের চেয়ে ছোট একটা সংখ্যায় পৌঁছালে সেটাকেই ভাগশেষ বলি।

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

এবারে তোমরা সংখ্যারেখার মাধ্যমে ১৩ কে৪ দিয়ে ভাগ করে ভাগফল ও ভাগশেষ নির্ণয় করো।

চলো সংখ্যারেখার মাধ্যমে ২ কে০ দিয়ে ভাগ করি।

সংখ্যারেখার ধারণা

 

এখানে, ভাজ্য = ২ এবং ভাজক ০। ফলে, ২ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই ০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ২ ই হবে। কাজেই কখনোই এই বিয়োগ শেষ হবে না। ফলে ভাগ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। কোনো ভাগফলও পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, ভাগ প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা অনুসারে কোনো ভাগফল পাওয়া যাচ্ছে না।

একারণে-

২ কে০ দিয়ে ভাগ করলে সেটাকে আমরা অসংজ্ঞায়িত (Undefined) বলি।

একইভাবে ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ এরকম সব সংখ্যাকেই০ দিয়ে ভাগ করলে আমরা অসংজ্ঞায়িত (Undefined) বলবো।

 

কিন্তু, ০ কে০ দিয়ে ভাগ করলে কী হবে?

 

সংখ্যারেখার ধারণা

 

এবারে কিন্তু একটু অন্যরকম ঘটনা ঘটল।

এখানে, ভাজ্য = ০ এবং ভাজক = ০। ফলে, ০ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই ০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ই হবে। এমনকি কোনোরকম লাফ না দিলে অর্থাৎ একবারও ০ বিয়োগ না করলেও একই ঘটনা ঘটবে। তাই ভাগফল ০, ১, ২, ৩, ৮, ১৫, ১৬ এভাবে অনেক কিছুই হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভাগফল নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

একারণে- ০ কে০ দিয়ে ভাগ করলে সেটাকে আমরা অনির্ণেয় (Indeterminate) বলি।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment