আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ সমতল জ্যামিতি। এটি নবম – দশম শ্রেনী গণিতের রেখা, কোণ ও ত্রিভুজ এর অন্তর্গত।
সমতল জ্যামিতি (Plane Geometry)
পূর্বেই বিন্দু, সরলরেখা ও সমতল জ্যামিতির তিনটি প্রাথমিক ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের যথাযথ সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব না হলেও এদের সম্পর্কে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা হয়েছে। বিমূর্ত জ্যামিতিক ধারণা হিসাবে স্থানকে বিন্দুসমূহের সেট ধরা হয় এবং সরলরেখা ও সমতলকে এই সার্বিক সেটের উপসেট বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ,
স্বীকার্য ১.
জগত (space) সকল বিন্দুর সেট এবং সমতল ও সরলরেখা এই সেটের উপসেট।
এই স্বীকার্য থেকে আমরা লক্ষ করি যে, প্রত্যেক সমতল ও প্রত্যেক সরলরেখা এক একটি সেট, যার উপাদান হচ্ছে বিন্দু। জ্যামিতিক বর্ণনায় সাধারণত সেট প্রতীকের ব্যবহার পরিহার করা হয়। যেমন, কোনো বিন্দু একটি সরলরেখার (বা সমতলের) অন্তর্ভুক্ত হলে বিন্দুটি ঐ সরলরেখায় (বা সমতলে অবস্থিত অথবা, সরলরেখাটি (বা সমতলটি) ঐ বিন্দু দিয়ে যায়। একইভাবে, একটি সরলরেখা একটি সমতলের উপসেট হলে সরলরেখাটি ঐ সমতলে অবস্থিত, অথবা, সমতলটি ঐ সরলরেখা দিয়ে যায় এ
রকম বাক্য দ্বারা তা বর্ণনা করা হয়।
সরলরেখা ও সমতলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ২.
দুইটি ভিন্ন বিন্দুর জন্য একটি ও কেবল একটি সরলরেখা আছে, যাতে উভয় বিন্দু অবস্থিত।
স্বীকার্য ৩.
একই সরলরেখায় অবস্থিত নয় এমন তিনটি ভিন্ন বিন্দুর জন্য একটি ও কেবল একটি সমতল আছে, যাতে বিন্দু তিনটি অবস্থিত।
স্বীকার্য ৪.
কোনো সমতলের দুইটি ভিন্ন বিন্দু দিয়ে যায় এমন সরলরেখা ঐ সমতলে অবস্থিত।
স্বীকার্য ৫.
ক) জগতে (space) একাধিক সমতল বিদ্যমান ।
খ) প্রত্যেক সমতলে একাধিক সরলরেখা অবস্থিত।
গ) প্রত্যেক সরলরেখার বিন্দুসমূহ এবং বাস্তব সংখ্যাসমূহকে এমনভাবে সম্পর্কিত করা যায় যেন রেখাটির প্রত্যেক বিন্দুর সঙ্গে একটি অনন্য বাস্তব সংখ্যা সংশ্লিষ্ট হয় এবং প্রত্যেক বাস্তব সংখ্যার সঙ্গে রেখাটির একটি অনন্য বিন্দু সংশ্লিষ্ট হয়।
মন্তব্য:
স্বীকার্য ১ থেকে স্বীকার্য ৫ কে আপতন স্বীকার্য (incidence axiom) বলা হয়। জ্যামিতিতে দূরত্বের ধারণাও একটি প্রাথমিক ধারণা। এ জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৬.
ক) P ও Q বিন্দুযুগল একটি অনন্য বাস্তব সংখ্যা নির্দিষ্ট করে থাকে। সংখ্যাটিকে P বিন্দু থেকে Q বিন্দুর দূরত্ব বলা হয় এবং PQ দ্বারা সূচিত করা হয়।
খ) P ও Q ভিন্ন বিন্দু হলে PQ সংখ্যাটি ধনাত্মক। অন্যথায়, PQ = 0
গ) P থেকে Q এর দূরত্ব এবং Q থেকে P এর দূরত্ব একই। অর্থাৎ PQ =QP
PQ = QP হওয়াতে এই দূরত্বকে সাধারণত P বিন্দু ও Q বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব বলা হয়। ব্যবহারিকভাবে, এই দূরত্ব পূর্ব নির্ধারিত এককের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।

স্বীকার্য ৫ (গ) অনুযায়ী প্রত্যেক সরলরেখায় অবস্থিত বিন্দুসমূহের সেট ও বাস্তব সংখ্যার সেটের মধ্যে এক-এক মিল স্থাপন করা যায়। এ প্রসঙ্গে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৭.
কোনো সরলরেখায় অবস্থিত বিন্দুসমূহের সেট এবং বাস্তব সংখ্যার সেটের মধ্যে এমনভাবে এক-এক মিল স্থাপন করা যায়, যেন রেখাটির যেকোনো দুইটি বিন্দু P, Q এর জন্য PQ = \a – b| হয়, যেখানে মিলকরণের ফলে P ও Q এর সঙ্গে যথাক্রমে a ও b বাস্তব সংখ্যা সংশ্লিষ্ট হয়।
এই স্বীকার্যে বর্ণিত মিলকরণ করা হলে, রেখাটি একটি সংখ্যারেখায় পরিণত হয়েছে বলা হয়। সংখ্যারেখায় P বিন্দুর সঙ্গে a. সংখ্যাটি সংশ্লিষ্ট হলে P কে a এর লেখবিন্দু এবং a কে P এর , স্থানাঙ্ক বলা হয়। কোনো সরলরেখাকে সংখ্যারেখায় পরিণত করার জন্য প্রথমে রেখাটির একটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক 0 এবং অপর একটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক 1 ধরে নেওয়া হয়। এতে রেখাটিতে একটি একক দূরত্ব এবং একটি ধনাত্মক দিক নির্দিষ্ট হয়। এ জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৮.
যেকোনো সরলরেখা AB কে এমনভাবে সংখ্যারেখায় পরিণত করা যায় যে, A এর স্থানাঙ্ক 0 এবং B এর স্থানাঙ্ক ধনাত্মক হয় ।
মন্তব্য: স্বীকার্য ৬ কে দূরত্ব স্বীকার্য, স্বীকার্য ৭ কে রুলার স্বীকার্য এবং স্বীকার্য ৮ কে রুলার স্থাপন স্বীকার্য বলা হয়।
জ্যামিতিক বর্ণনাকে স্পষ্ট করার জন্য চিত্র ব্যবহার করা হয়। কাগজের ওপর পেন্সিল বা কলমের সূক্ষ্ম ফোঁটা দিয়ে বিন্দুর প্রতিরূপ আঁকা হয়। সোজা রুলার বরাবর দাগ টেনে সরলরেখার প্রতিরূপ আঁকা হয় । সরলরেখার চিত্রে দুই দিকে তীরচিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয় যে, রেখাটি উভয়দিকে সীমাহীনভাবে বিস্তৃত। স্বীকার্য ২ অনুযায়ী দুইটি ভিন্ন বিন্দু A ও B একটি অনন্য সরলরেখা নির্দিষ্ট করে যাতে বিন্দু দুইটি অবস্থিত হয়। এই রেখাকে AB রেখা বা BA রেখা বলা হয়। স্বীকার্য ৫ (গ) অনুযায়ী এরূপ প্রত্যেক সরলরেখা অসংখ্য বিন্দু ধারণ করে।
স্বীকার্য (৫) (ক) অনুযায়ী জগতে একাধিক সমতল বিদ্যমান। এরূপ প্রত্যেক সমতলে অসংখ্য সরলরেখা রয়েছে। জ্যামিতির যে শাখায় একই সমতলে অবস্থিত বিন্দু, রেখা এবং এদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্যামিতিক সত্তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে সমতল জ্যামিতি (plane geometry) বলা হয়। এ পুস্তকে সমতল জ্যামিতিই আমাদের মূল বিবেচ্য বিষয়। সুতরাং, বিশেষ কোনো উল্লেখ না থাকলে বুঝতে হবে যে, আলোচ্য সকল বিন্দু, রেখা ইত্যাদি একই সমতলে অবস্থিত। এরূপ একটি নির্দিষ্ট সমতলই আলোচনার সার্বিক সেট। এছাড়া শুধু রেখা উল্লেখ করলে আমরা সরলরেখাই বুঝাবো ।
আরও দেখুনঃ