আজকে আমরা সরলরেখার সমীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা উচ্চতর গণিতের স্থানাঙ্ক জ্যামিতি অংশের অন্তর্গত।
সরলরেখার সমীকরণ
ধরি, একটি নির্দিষ্ট সরলরেখা L দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু A (3, 4) এবং B (5,7) দিয়ে অতিক্রম করে।
নিচের চিত্রে রেখাটি দেখানো হলো।
তাহলে AB সরলরেখার ঢাল,
m1 =(7 – 4)/(5 – 3) = 3 /2 …. (1)
মনে করি, P(x, y) সরলরেখা L এর উপর একটি বিন্দু।
তাহলে AP রেখার ঢাল, m2 = (y – 4)/(x – 3) …… (2)
কিন্তু AP ও AB একই সরলরেখা হওয়ায় উভয়ের ঢাল সমান। অর্থাৎ,
m1 = m2
3 /2 = (y – 4)/(x – 3) [(1) ও ( 2 ) থেকে পাই]
বা, 3x – 9 = 2y – 8
বা, 2y = 3x – 1
বা, y = 3 /2x -1/2 ……(3)
আবার, PB রেখার ঢাল, m3 = (7-y)/( 5 – x ) ………(4)
AB এবং PB রেখার ঢাল সমান বলে,
m₁ = m3
বা, 3 /2 = (7 – y)/(5 – x) [(1) ও (4) থেকে পাই]
বা, 15 – 3x = 14 – 2y
বা, 2y+15 = 3x+14
বা, 2y = 3x-1
বা, y = 3/2x – 1/2 ……….(5)

সমীকরণ (3) ও (5) একই সমীকরণ। সুতরাং সমীকরণ (3) বা (5) হচ্ছে সরলরেখা L এর কার্তেসীয় সমীকরণ। লক্ষ করলে দেখা যাবে সমীকরণ (3) বা (5) x এবং y এর একঘাত সমীকরণ এবং এটি একটি সরলরেখা নির্দেশ করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় x এবং y এর একঘাত সমীকরণ সব সময় একটি সরলরেখা নির্দেশ করে। সমীকরণ (3) বা (5) কে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়:
y = 3/2x – 1/2
(y – 4)/(x – 3) = 3 /2 অথবা (y – 7)/(x – 5) = 3 /2
অর্থাৎ, (y – 4)/(x – 3) = (7 – 4)/(5 – 3) অথবা (y – 7)/(x – 5) = (7 – 4)/(5 – 3)
অর্থাৎ, (y – 4)/(x – 3) = m অথবা (y – 7)/(x – 5) = m
সুতরাং সাধারণভাবে বলা যায়, যদি দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু A (x1,y1) এবং B (x2,y2) কোনো সরলরেখার উপর অবস্থিত হয়, তাহলে ঢাল
m= (Y2 – Y1)/(X2 – X1) (rise/run) বা (ওঠা/হাঁটা )
এবং উক্ত সরলরেখার কার্তেসীয় সমীকরণ হবে
(y – y1)/(x – x1)= m … (6) বা, (y – y2)/(x – x2) =m … (7)
সমীকরণ (6) হতে পাই
(y – y1) = m (x – x1) … ( 8 )
সমীকরণ (7) হতে পাই,
y – y2 = m (x – x2 ) … (9)
.: (৪) এবং (9) হতে আমরা বলতে পারি একটি সরলরেখার ঢাল m হলে এবং রেখাটি নির্দিষ্ট বিন্দু (x1,y1) বা (72,32) দিয়ে অতিক্রম করলে রেখাটির কার্তেসীয় সমীকরণ (8) অথবা (9) দ্বারা নির্ণয় করা যাবে। আবার (6) ও (7) সমীকরণ হতে আমরা পাই,
m=(y – y1)/(x – x1) = (y – y2)/(x – x2) ……..(10)
সমীকরণ (10) হতে স্পষ্টভাবে বলা যায়, একটি সরলরেখা দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু A(x1,y1) এবং B (x2, Y2) দিয়ে অতিক্রম করলে এর কার্তেসীয় সমীকরণ হবে,
(y – y1)/(x – x1) = (y1 – y2)/(x1 – x2)
বা (y – y2)/(x – x2) = (y2 – y1)/(x2 – x1)
যেহেতু, m = (y1 – y2)/(x1 – x2) = (y2 – y1)/(x2 – x1)
উপরোক্ত আলোচনা নিম্নের উদাহরণসমূহের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হলো যাতে শিক্ষার্থীরা সরলরেখার ঢাল ও সমীকরণ সহজেই বুঝতে পারে।
উদাহরণ ২০.
A (3, 4 ) ও B (6, 7 ) বিন্দুদ্বারা সংযোগকারী রেখার সমীকরণ নির্ণয় কর।
সমাধান:
AB রেখার ঢাল m = ওঠা/হাঁটা = = (7 – 4)/(6 – 3) = 3/3 = 1
সমীকরণ (8) ব্যবহার করে AB রেখার সমীকরণ, y – 4 = 1 (x – 3)
বা, y – 4 = x – 3
বা, y = x + 1
সমীকরণ (11) ব্যবহার করে AB রেখার সমীকরণ (y-4)/(x-3) = (4-7)/( 3-6)
বা, (y-4)/(x-3) = – 3/– 3 = 1
বা, y – 4 = x – 3
বা, y = x + 1
লক্ষণীয় সূত্র (8) বা (9) বা (11) যেকোনোটি ব্যবহার করে দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দুগামী রেখার সমীকরণ নির্ণয় করা যায়। শিক্ষার্থীগণ সুবিধামত যেকোনোটি ব্যবহার করতে পারবে।
উদাহরণ ২১.
একটি নির্দিষ্ট সরলরেখার ঢাল 3 এবং রেখাটি (−2, −3) বিন্দুগামী। রেখাটির সমীকরণ নির্ণয় কর।
সমাধান:
দেওয়া আছে, ঢাল m = 3 এবং নির্দিষ্ট বিন্দু (x1,y1) = (-2, – 3)
.:. রেখাটির সমীকরণ, y – y1 = m (x – x1)
বা, y – ( – 3) = 3 {x – (-2)}
বা, y + 3 = 3(x + 2)
বা, y = 3x + 3
উদাহরণ ২২.
সরলরেখা y = 3x + 3 একটি নির্দিষ্ট বিন্দু P(t, 4) দিয়ে অতিক্রম করে। P বিন্দুর স্থানাঙ্ক নির্ণয় কর। রেখাটি x এবং y অক্ষকে যথাক্রমে A ও B বিন্দুতে ছেদ করে। A ও B বিন্দুর স্থানাঙ্ক নির্ণয় কর।
সমাধান :
P (t, 4 ) বিন্দুটি y = 3x + 3 রেখার উপর অবস্থিত হওয়ায় বিন্দুর স্থানাঙ্ক রেখার সমীকরণকে সিদ্ধ করবে।
সুতরাং, 4 = 3. t + 3
বা, 3t = 4 – 3
বা, t = 1/3
P বিন্দুর স্থানাঙ্ক P (t, 4) = P (1/3,4)
y = 3x + 3 রেখাটি x অক্ষকে A বিন্দুতে ছেদ করে। কাজেই A বিন্দুর কোটি বা y স্থানাঙ্ক 0 [যেহেতু x অক্ষের সকল বিন্দুতে y এর মান শূন্য]
সুতরাং, 0 = 3x + 3 বা, x = -1
A বিন্দুর স্থানাঙ্ক ( 1, 0 )
আবার, y = 3x + 3 রেখাটি y অক্ষকে B বিন্দুতে ছেদ করে। কাজেই B বিন্দুর ভুজ বা স্থানাঙ্ক 0 [যেহেতু y অক্ষের সকল বিন্দুতে x এর মান শূন্য]
সুতরাং, y = 3.0 + 3 বা, y = 3
.. B বিন্দুর স্থানাঙ্ক (0, 3)
এখন কার্তেসীয় তলে AB রেখাটি অঙ্কন করি। AB রেখাটি অক্ষকে (–1, 0 ) বিন্দুতে এবং y অক্ষকে (0,3) বিন্দুতে ছেদ করেছে। অর্থাৎ x এর মান যখন – 1 তখন y = 3x + 3 রেখাটি Ꮖ অক্ষকে ছেদ করেছে। আবার y এর মান যখন 3 তখন রেখাটি y অক্ষকে ছেদ করেছে। সুতরাং রেখাটির x ছেদক – 1 এবং y ছেদক 3।
উল্লম্বিক নয় এমন সরলরেখার সাধারণ সমীকরণকে নিম্নোক্ত রূপে প্রকাশ করা হয়।
y = mx + c
এখানে m রেখাটির ঢাল এবং c হলো y অক্ষের ছেদক এবং c > 0 এর জন্য রেখাটি চিত্র (ক) এ দেখানো হলো।
আবার y অক্ষের সমান্তারাল অর্থাৎ, ≈ অক্ষের উপর লম্ব রেখার সাধারণ সমীকরণ হলো x = al একইভাবে অক্ষের সমান্তরাল অর্থাৎ, y অক্ষের উপর লম্ব রেখার সাধারণ সমীকরণ হলো y = b [চিত্র (ক)]।
লক্ষণীয় c এর মান ধনাত্মক হওয়ায় y = mx + c রেখাটি y অক্ষের ধনাত্মক দিকে c একক দূরে ছেদ করেছে। m এর মান ধনাত্মক (m tan > 0 ) হওয়ায় y = mx + c রেখা দ্বারা উৎপন্ন কোণটি = সূক্ষ্মকোণ। a ও b এর মান ধনাত্মক হওয়ায় x = a রেখাটি y অক্ষের ডান দিকে এবং y = b রেখাটি x অক্ষের উপরে দেখানো হয়েছে।
a, b ও c এর ঋণাত্মক মানের বেলায় রেখাগুলোর অবস্থান চিত্র (খ) এ দেখানো হলো।
চিত্র (ক) ও (খ) এবং উপরের আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট করেই বলতে পারি c = 0 হলে y = mx রেখাটি মূলবিন্দু (0,0) দিয়ে যাবে। a = 0 হলে রেখাটি y অক্ষ এবং b = 0 হলে রেখাটি æ অক্ষ [চিত্র (গ)]। সুতরাং x অক্ষের সমীকরণ y = 0 এবং y অক্ষের সমীকরণ x = 0
উদাহরণ ২৩.
y – 2x + 3 = 0 রেখার ঢাল ও ছেদক নির্ণয় কর। কার্তেসীয় তলে রেখাটি এঁকে দেখাও।
সমাধান:
y – 2x + 3 = 0
বা, y = 2x – 3 [y = mx + c আকার]
ঢাল, m = 2 এবং y অক্ষের ছেদক, c = – 3
এখন রেখাটি x ও y অক্ষকে A ও B বিন্দুতে ছেদ করলে,
A বিন্দুর স্থানাঙ্ক (3/2,0) T = (23,0) [x অক্ষে y = 0 বসিয়ে
x = 3/2]
এবং B বিন্দুর স্থানাঙ্ক (0, − 3 ) [y অক্ষে x = 0 বসিয়ে y = -3]
কার্তেসীয় তলে রেখাটি এঁকে দেখানো হলো।
উদাহরণ ২৪.
A(–1,3) এবং B(5, 15 ) বিন্দুদ্বয়ের সংযোগ রেখা x ও y অক্ষকে যথাক্রমে P ও Q বিন্দুতে ছেদ করে। PQ রেখার সমীকরণ নির্ণয় কর এবং PQ এর দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধান:
AB রেখার সমীকরণ, (y-3 )/(x+1) = (3-15)/( -1-5)
= -12/-6 = 2
বা, y- 3=2x+2
বা, y=2x+5…(1)
(1) হতে P বিন্দুর স্থানাঙ্ক (-5/2, 0 )এবং Q বিন্দুর স্থানাঙ্ক (0, 5 )
.:. PQ রেখার সমীকরণ, (y-0)/( x+ 5/2) = (0-5)/( -5/2 – 0)
বা, 2y/( 2x + 5) = 10 /5 = 2/1
বা, 2y=4x+10
বা, y=2x+5
মন্তব্য:
AB এবং PQ একই সরলরেখা।
PQ এর দৈর্ঘ্য = √{(( -5/2 – 0)² +(0-5)²}
= √(25 /4) +25 = √(125/4) = 5√5/2 একক।
উদাহরণ ২৫.
A (3, 4), B( – 4, 2), C (6, − 1 ) এবং D(k, 3) বিন্দু চারটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত।
ক) দেখাও যে, A ও B বিন্দুর সংযোগ সরলরেখা x অক্ষের সাথে সূক্ষ্মকোণ উৎপন্ন করে।
খ) P(x, y) বিন্দুটি A ও B থেকে সমদূরবর্তী হলে, দেখাও যে, 14x + 4y = 5
গ) ABCD চতুর্ভুজক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ∆ABC এর ক্ষেত্রফলের তিনগুণ হলে k এর মান নির্ণয় কর।
সমাধান :
ক) AB রেখার ঢাল m হলে,
m = (2-4)/( -4-3) = -2/-7 = = 2/7
ঢাল ধনাত্মক হওয়ায় রেখাটি x অক্ষের ধনাত্মক দিকের সাথে সূক্ষ্মকোণ উৎপন্ন করে।
খ) PA= √{(x-3)² + (y − 4)²} এবং PB = √{(x + 4)² + (y – 2)² }
P বিন্দু A ও B বিন্দু থেকে সমদূরবর্তী হওয়ায় PA = PB
√{(x − 3)² + (y − 4)²}
= √{(x + 4)² + (y − 2)²}
বা, x²-6x+9+ y² – 8y +16 = x² + 8x + 16 + y² – 4y + 4
বা,-6x-8y-8x + 4y = 20-25
বা,-14x-4y=-5
.. 14x+4y5
গ) ABCD চতুর্ভুজ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
1/2|3 -4 6 k 3|
|4 2 -1 3 4|
= 1/2 {(6 +4 +18 + 4k − (−16 +12 − k +9)} = 1/2(28+4k −5+ k) = 1/2(23+5k)
=ABC ত্রিভুজ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
1/2|3 -4 6 3|
|4 2 -1 4|
= 1/2{(6 + 4 +24-(-16+12-3)}
= 41 /2
শর্তমতে, =1/2(23 + 5k) = 3 x 41/2
23+5k = 123
বা, 5k = 100
বা, k = 20
.. k = 20
আরও দেখুনঃ
2 thoughts on “সরলরেখার সমীকরণ”