সরল সমীকরণ । মাধ্যমিক ৬ষ্ট শ্রেণি গণিত, ২০২৩

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সরল সমীকরণ – যা সরল সমীকরণ অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।১৭শ শতক পর্যন্ত কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত। ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্ত কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন।

সরল সমীকরণ

ছবিতে যে জিনিসটা দেখতে পাচ্ছ তার নাম কী?

সরল সমীকরণ
এই জিনিসটার নাম হচ্ছে ‘দাঁড়িপাল্লা’। যেকোনো দোকানে দেখতে পাবে এই জিনিসটা নিয়ে ওজন মেপে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করা হয়। আমরা আপাতত প্রচলিত অর্থে কোনো বস্তুর ওজন ১ কেজি, ২ কেজি এভাবেই বলি। আসলে কিন্তু ওজন ১ কেজি’ কথাটা ঠিক নয়। খেয়াল করে দেখবে মাপা হয় কিন্তু গ্রাম, কেজি (kilogram, সংক্ষেপে kg) এককে। কাজেই বুঝতে পারছ আসলে ওজন নয়, মাপা হয় ভর।

এই ব্যাপারটা আরও সুন্দর করে বুঝতে চাইলে ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের ‘অধ্যায় ১- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ এর ‘বিভিন্ন রাশির পরিমাপ’ অংশটা পড়ে নাও। আচ্ছা, দাঁড়িপাল্লা দিয়ে কীভাবে ওজন মাপে সেটা কী জানো? দাঁড়িপাল্লার দুইটা পাল্লা থাকে একটা বামে এবং একটা ডানে। দুইটা পাল্লার যেদিকে বেশি ওজনের জিনিস থাকে সেটার ভর বেশি। তাই সেটা নিচে নেমে যায়। তার মানে যে পাল্লায় কম ওজনের জিনিস থাকে সেটা উপরের দিকে উঠে যায়। যেমন:

একজন দোকানদার দাঁড়িপাল্লার বাম পাল্লায় 5 কেজি ওজনের একটি বাটখারা ও ডান পাল্লায় কিছু পরিমাণ আলু রাখলেন। পাল্লা দুইটির জিনিসের ওজন কি সমান হয়েছে? এখানে আলুর ওজন কত তা নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব?

 

সরল সমীকরণ

তাহলে আমরা বলতে পারি আলুর ওজন অজানা বা অজ্ঞাত। এবার দোকানদার ডান পাল্লায় আলুর সাথে 2 কেজি ওজনের একটি বাটখারা দিলেন। ফলে দুই পাল্লার জিনিসের ওজন সমান হয়েছে। এখন আলুর অজানা ওজন কেজি ধরা হলে, ডান পাল্লায় বাটখারাসহ জিনিসের মোট ওজন হবে (x + 2) কেজি। তাহলে, দুই পাল্লার এই সমতাটিকে একটি বীজগাণিতিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি এবং তা হলো: x+2=5

এটি হলো একটি গাণিতিক বাক্য ও সমতা। আর সমান চিহ্ন সংবলিত গাণিতিক বাক্যকে আমরা সমীকরণ বলে থাকি। এখানে অজানা বা অজ্ঞাত রাশি X কে চলক (variable) বলি। সাধারণত ইংরেজি বর্ণমালার ছোট হাতের অক্ষরগুলোকে অজ্ঞাত রাশি বা চলক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এখন একটু চিন্তা করে দেখো ‘দাঁড়িপাল্লা’ ও ‘সমীকরণ’ এর মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাও কিনা। দাঁড়িপাল্লায় দুইটি পাল্লা থাকে। একটি বাম পাল্লা ও অপরটি ডান পাল্লা। উভয় পাল্লার ওজন সমান হলে দাঁড়িপাল্লাটি সমতায় আসে। যেকোনো একটি পাল্লা থেকে ওজন কমিয়ে নিলে অপর পাল্লাটি নিচের দিকে নেমে যায়। অর্থাৎ ঐ দিকের ওজন বেশি হয়। সেক্ষেত্রে দাঁড়িপাল্লাটি সমতায় থাকে না।

 

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ভেবে দেখো তো কি করলে দাঁড়িপাল্লাটিকে আবার সমতায় আনা যাবে? তোমরা ঠিকই ভাবছ দুটি কাজ করে দাঁড়িপাল্লাটি সমতায় আনা যাবে।

১. দাঁড়িপাল্লাটির যে পাল্লা নিচে নেমে গেছে, সেটি থেকে ওজন কমিয়ে অথবা

২. দাঁড়িপাল্লাটির যে পাল্লা উপরে উঠে গেছে সেই পাল্লাটিতে ওজন বাড়িয়ে।

অপরদিকে একটি সমীকরণেরও দুইটি পক্ষ থাকে। একটি বামপক্ষ ও অপরটি ডানপক্ষ। উভয় পক্ষের মাঝে একটি সমান (=) চিহ্ন থাকে। সমান চিহ্নের বাম পাশের রাশিকে আমরা বামপক্ষ এবং ডান পাশের রাশিকে ডানপক্ষ বলে থাকি। চলকের নির্দিষ্ট মানের জন্য সমীকরণের বামপক্ষ ও ডানপক্ষ অবশ্যই সমান হতে হবে।

উদাহরণ সরূপ আমরা বলতে পারি: x + 4 = 13, x+6=9, 2y-15, 3- z = 10 ইত্যাদি সমীকরণ। এখানে চলক হিসেবে x, y, z ব্যবহার করা হয়েছে এবং চলকের নির্দিষ্ট মানের জন্য সমীকরণগুলোর বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সমান।

সমীকরণ সম্পর্কে আরও জানি

তোমাদের অনেকের মধ্যেই সমীকরণ সম্পর্কে প্রশ্ন আছে মনে হচ্ছে। তাহলে চলো একটি গল্পের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি। মনে করো স্বপ্নীল মিতার চেয়ে 2 বছরের ছোট। যদি মিতার বয়স বছর হয়, তবে স্বপ্নীলের বয়স হবে (x – 2) বছর তাই না? এখন ধরো স্বপ্নীলের বয়স 12 বছর। তাহলে, (x – 2) এবং 12 এর মধ্যে নিশ্চয়ই একটি সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটি হলো: x – 2 = 12

এটিই হলো x চলকবিশিষ্ট একটি সমীকরণ।

এবার চলো X এর বিভিন্ন মানের জন্য (x-2) এর মানগুলো বের করে নিচের ছকটি পূরণ করি:

 

সরল সমীকরণ

টেবিলের খালি ঘরগুলো পূরণ করো। টেবিলটি লক্ষ করো, দেখতে পাবে একমাত্র x = 14 এর জন্য x – 2 = 12 সম্পর্কটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সমান হয়। এর অন্য কোনো মান যেমন: x = 12, x = 16 ইত্যাদি এর জন্য x – 2 = 12 সম্পর্কটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সমান হয় না। সবশেষ আমরা বলতে পারি, সমীকরণ তাকেই বলব যা চলকের নির্দিষ্ট মানের জন্য বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সমান হয়।

তোমরা নিশ্চয়ই জানো চলকযুক্ত বীজগাণিতিক রাশিকে বৃহত্তর (>) বা ক্ষুদ্রতর (<) চিহ্নের মাধ্যমেও প্রকাশ করা যায়।

যেমন: x -18, 2y +713, z 15 ইত্যাদি। তবে এই ধরনের চলকযুক্ত বীজগাণিতিক

সম্পর্ককে সমীকরণ বলা যাবে না। একটু চিন্তা করে দেখো তো, কেন তাদেরকে সমীকরণ বলা যাবে না? এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে কি (=) চিহ্ন আছে? এগুলো কি চলকের নিদিষ্ট মানের জন্য সিদ্ধ হয়? নিশ্চয়ই না, তাই না? বৃহত্তর (>) বা ক্ষুদ্রতর (<) চিহ্নযুক্ত রাশিগুলো চলকের অসংখ্য মানের জন্য সঠিক হয়ে থাকে।

নিচের সম্পর্কটি লক্ষ করো:

15 + 7 = 21, এটি কি সমীকরণ? সম্পর্কটিতে কিন্তু (=) চিহ্ন আছে। চিন্তা করে উত্তর দাও।

সরল সমীকরণ (Linear Equation)

অজ্ঞাত রাশি বা চলকের একঘাতবিশিষ্ট সমীকরণই হলো সরল সমীকরণ। যেমন: 2×50, y + 3 = 10, 2×1 = x + 4 ইত্যাদি। কেননা এদের প্রত্যেকটি এক চলকবিশিষ্ট ও একঘাতবিশিষ্ট।

বাস্তব সমস্যাকে এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ

নিচের ছকের বাস্তব সমস্যাগুলোকে এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করে ছকটি পূরণ করো। এক্ষেত্রে তুমি তোমার পছন্দমতো অজানা রাশি বা চলক ব্যবহার করতে পারবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment