আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ অজানা রাশির সূচকে ঘন । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের অজানা রাশির সূচক, গুণ ও তাদের প্রয়োগ এর অন্তর্গত।
অজানা রাশির সূচকে ঘন
রুবিক্স কিউবের সাথে তোমরা অনেকে পরিচিত। পাশের ছবিতে একটি 3 × 3 × 3 রুবিক্স কিউব দেখা যাচ্ছে। 3 x 3 x 3 এর মানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বরাবর তিনটি করে ছোট ঘনক আছে। আর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান হলে তাকে ঘনক বলা হয়। তাহলে, রুবিক্স কিউব নামের অর্থ কী বুঝতে পারলে? এখন, একটি রুবিক্স কিউব হাতে নিলে দেখতে পাবে এটি ছোট ছোট অনেকগুলো ঘনক দিয়ে তৈরি। তাহলে, ছবির রুবিক্স কিউবে কয়টি ছোট ঘনক আছে। বলতে পারবে?
এবার আমরা একটি 2 × 2 × 2 কিউব তৈরি করবো। একই আকারের কয়েকটি ছোট ছোট ঘনক নাও। (এক্ষেত্রে কাঠের তৈরি ঘনক নিতে পারো অথবা কাগজ দিয়েও নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারো। ) চিত্রের মত করে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বরাবর দুইটি করে ঘনক বসিয়ে একটি বড় ঘনক বানালে কয়টি ছোট ঘনক প্রয়োজন হয় লক্ষ্য করো।
একটু লক্ষ করলে দেখবে প্রথমে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর দুইটি করে ছোট ঘনক নিয়ে 2×2=22 = 4 টি ঘনক নিয়েছ। আর এই 4টি ঘনকের উপরের তলগুলি একটা ২ এর বর্গ তৈরী করেছে। এরপর আবার উচ্চতা বরাবর দুইটি করে ঘনক নেওয়ার জন্য মোট 4 x 2 = 2 × 2 × 2 = 23 = 8টি ঘনক প্রয়োজন হয়েছে।
আমরা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বরাবর সমান সংখ্যক ছোট ঘনক নিয়ে একটি বড় ঘনক তৈরি করলাম। এখানে, মোট যতগুলো ছোট ঘনক প্রয়োজন হচ্ছে সেই সংখ্যাকে ঘন সংখ্যা বা পূর্ণঘন সংখ্যা বলা হয়।
যেমন: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বরাবর 2 টি করে ছোট ঘনক নিয়ে একটি বড় ঘনক তৈরি করতে মোট 2 × 2 × 2 = 23 = ৪ টি ছোট ঘনক প্রয়োজন হচ্ছে। এক্ষেত্রে, ৪ কে আমরা ২ এর ঘন বা 23 বলি এবং সেকারণেই ৪ একটি ঘন সংখ্যা বা পূর্ণঘন সংখ্যা।
তাহলে আমরা দেখলাম কোনো সংখ্যার ঘন নির্ণয়ের জন্য ঐ সংখ্যাকে তিনবার গুণ করতে হবে।
যেমন- 3 এর ঘন 3 x 3 x 3 = 33 = 27 এবার ছবির প্রতিটি রুবিক্স কিউব তৈরি করতে মোট কতগুলো ছোট ঘনক প্রয়োজন হয়েছে তা নির্ণয় করে
ছক ১
বর্গ সংখ্যা চেনার সময় আমরা অজানা রাশির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফলের সাথে তুলনা করেছিলাম। | এবার চিন্তা করে দেখতো ঘন সংখ্যার ক্ষেত্রে যদি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বরাবর কতগুলো ছোট ঘনক আছে | সেটা না জানা থাকে তাহলে কী করতে পারি?
আমরা জানি, কোন ঘনকের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা প্রত্যেকেই 1 একক হলে তাকে একক ঘনক বলা হয়। একক ঘনকের আয়তনকে আমরা 1 ঘন একক বলি। তাহলে আয়তনের সাথে খুব সহজেই আমরা ঘন সংখ্যার তুলনা করতে পারি।
আয়তাকার ঘনবস্তুর আয়তন = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা
আর, ঘনকও কিন্তু একটি আয়তাকার ঘনবস্তু যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা পরস্পর সমান।
তাহলে ছবির ঘনকের আয়তন = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা = x x. x = x3 ঘন একক
আমরা দেখেছি, 3 x 3=32 কে যেমন 3 এর বর্গ বলা হয়।
একইভাবে, x.x.x=x3 কে X এর ঘন (x cubed) বলা হয়।
কিন্তু আমরা এটাও জানি যে আয়তাকার ঘনবস্তুর আয়তন = X.X.X=X3
উপরের উদাহরণ থেকে আমরা পেলাম যে, X গঠন করতে X কে X বার গুণ করতে হয়েছে।
সুতরাং আমরা লিখতে পারি
কোনো রাশিতে একই উৎপাদক যতবার গুণ আকারে থাকে তাকে ঐ উৎপাদকের সূচক বলে। আর ঐ উৎপাদকটিকে ভিত্তি বলে।
নিচের ছবি থেকে সংখ্যার সূচকের সাথে অজানা রাশির সূচকের কি কোন মিল খুঁজে পাচ্ছ?
নিচের টেবিলটি পূরণ করো:
যখন আমরা একটি সূচকীয় রাশি দ্বারা অন্য সূচকীয় রাশিকে গুণ করি তখন কি ঘটে তোমরা লক্ষ করেছ কি?চলো আমরা দেখি কি ঘটে যখন x6 কে x3 দ্বারা গুণ করি।
সুতরাং আমরা লিখতে পারি, x6. x3 = x(6+3) = x9
এবার নিচের খালিঘরগুলি পূরণ করো:
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একই ভিত্তির একাধিক সূচকীয় রাশিকে গুণ করলে এদের ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকবে কিন্তু ঘাতগুলো যোগ হবে। সূচকের গুণের এই নিয়ম (Multiplication Rule of Exponent) টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূচকের গুণের নিয়ম (Multiplication Rule of Exponent) :
xm.xn = (X. X … … X ) . (X. X … …X) = xm+n ( x কে m সংখ্যক বার গুণ ) ( x কে n সংখ্যক বার গুণ )
চলো এবার x7 কে x3 দ্বারা ভাগ করলে কী হয় দেখি। আমরা ইতিমধ্যেই শিখেছি লবের হলো X কে 7 3 বার গুণ করা। একইভাবে হরের x হলো X কে 3 বার গুণ করা। হরে-লবে কাটাকাটি করি।
x7y5 /x³ = (x.x.x.x.x.x.x /x.x.x). (x.x.x.x/1) = x4.
যদি ভিত্তি ভিন্ন ভিন্ন হয়, তবে ভিত্তি ভিন্ন ধরে হরে-লবে কাটাকাটি করতে হবে।
x³y5 /x2y3 = (x.x.x /x.x). (y.y.y.y.y/y.y.y) = xy2.

তাহলে দেখা যাচ্ছে, একই ভিত্তির একাধিক সূচকীয় রাশিকে ভাগ করলে এদের ভিত্তি অপরিবর্তিত থাকবে কিন্তু লবের ঘাত থেকে হরের ঘাত বিয়োগ হবে। সূচকের ভাগের এই নিয়ম বা বিধি (Division Rule of Exponent) টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরও দেখুনঃ