বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস । এটি নবম – দশম শ্রেনী গণিতের বাস্তব সংখ্যার অন্তর্গত।

 

বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস

 

বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Real Numbers )

স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Number) :

1, 2, 3, 4, … ইত্যাদি স্বাভাবিক সংখ্যা বা ধনাত্মক অখণ্ড সংখ্যা। 2, 3, 5, 7,… ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যা এবং 4, 6, 8, 9, … ইত্যাদি যৌগিক সংখ্যা। দুইটি স্বাভাবিক সংখ্যার গ.সা.গু. 1 হলে এদেরকে পরস্পরের সহমৌলিক সংখ্যা বলা হয়। যেমন 6 3 35 পরস্পরের সহমৌলিক।

পূর্ণসংখ্যা (Integer):

শূন্যসহ সকল ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অখণ্ড সংখ্যাকে পূর্ণসংখ্যা বলা হয়। অর্থাৎ …, − 3, 2, − 1, 0, 1, 2, 3, … ইত্যাদি পূর্ণসংখ্যা।

ভগ্নাংশ সংখ্যা (Fractional Number) :

p/q আকারের কোনো সংখ্যাকে (সাধারণ) ভগ্নাংশ সংখ্যা বা সংক্ষেপে ভগ্নাংশ বলা হয়, যেখানে q ≠ 0, q ≠ 1 এবং q দ্বারা p নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। যেমন 1/2, 3/2, -5/3,  4/6 ইত্যাদি (সাধারণ) ভগ্নাংশ সংখ্যা। কোনো (সাধারণ) ভগ্নাংশ এর ক্ষেত্রে p/q, p < q হলে ভগ্নাংশটিকে প্রকৃত ভগ্নাংশ এবং p > q হলে ভগ্নাংশটিকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন 1/2, 1/3, 2/3, 1/4 ইত্যাদি প্রকৃত ভগ্নাংশ এবং 3/2, 4/3, 5/3, 5/4, ……. ইত্যাদি অপ্রকৃত ভগ্নাংশ ।

মূলদ সংখ্যা (Rational Number) :

p/q আকারের কোনো সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা বলা হয়, যখন p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ 0 যেমন 3/1 = 3, 11/2 = 5.5,5/3  = 1.666 … ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা। যে কোনো  মূলদ সংখ্যাকে দুইটি সহমৌলিক সংখ্যার অনুপাত হিসাবেও লেখা যায়। সকল পূর্ণসংখ্যা ও ভগ্নাংশ‍ই মূলদ সংখ্যা।

 

বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস

 

অমূলদ সংখ্যা (Irrational Number) :

যে সংখ্যাকে আকারে প্রকাশ করা যায় না, যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q ≠ 0, সে সংখ্যাকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়। পূর্ণবর্গ নয় এরূপ যে কোনো স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গমূল কিংবা তার ভগ্নাংশ একটি অমূলদ সংখ্যা। যেমন √2 = 1.414213 …,
√3 = 1.732…, √5 2 = 1.118…, ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যা। কোনো অমূলদ সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করা যায় না।

দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যা (Decimal Fractional Number) :

মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক দিয়ে প্রকাশ করা হলে একে দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন, 3 = 3.0, = 5/2 = 2.5, 10/3 = 3.3333…, √3 = 1.732 …, ইত্যাদি দশমিক ভগ্নাংশ। দশমিক বিন্দুর পর অঙ্ক সংখ্যা সসীম হলে, এদেরকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ এবং অঙ্ক সংখ্যা অসীম হলে, এদেরকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন, 4 0.52, 3.4152 ইত্যাদি সসীম দশমিক ভগ্নাংশ এবং 4/3 = 1.333…, √5 = 2.123512367…. ইত্যাদি অসীম দশমিক ভগ্নাংশ।

আবার, অসীম দশমিক ভগ্নাংশগুলোর মধ্যে দশমিক বিন্দুর পর কিছু অঙ্কের পূনরাবৃত্তি হলে, তাদেরকে অসীম আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং অঙ্কগুলোর পুনরাবৃত্তি না হলে 122 এদের অসীম অনাবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়। যেমন, 1.2323 …, 5.1654 ইত্যাদি অসীম 99 আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং 0.523050056, 2.12340314… ইত্যাদি অসীম অনাবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ ।

বাস্তব সংখ্যা (Real Number) :

সকল মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়, যেমন নিচের সংখ্যাগুলো বাস্তব সংখ্যা।
0, ±1, ±2, ±3,…        ±1/2, ±3/2,  ±4/3, ………

2, 3, 5, 7, … 1.23, 0.415, 1.3333…, 0.62, 4.120345061…

ধনাত্মক সংখ্যা (Positive Number):

শূন্য থেকে বড় সকল বাস্তব সংখ্যাকে ধনাত্মক সংখ্যা বলা হয়। যেমন,2, 1/2, 3/2, √2, 0.415, 0.62, 4.120345061… ইত্যাদি ধনাত্মক সংখ্যা।

ঋণাত্মক সংখ্যা (Negative Number):

শূন্য থেকে ছোট সকল বাস্তব সংখ্যাকে ঋণাত্মক সংখ্যা বলা হয়। যেমন, – 2, /1/2, -3/2, –√2, -0.415, -0.62, -4.120345061 ঋণাত্মক সংখ্যা ।

অঋণাত্মক সংখ্যা (Non- negative Number): শূন্যসহ সকল ধনাত্মক সংখ্যাকে অঋণাত্মক সংখ্যা বলা হয়। যেমন, 0, 3, 2,0.612,1.3, 2.120345 … ইত্যাদি অঋণাত্মক সংখ্যা।

নিচের চিত্রে আমরা বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস দেখতে পাই।

 

বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস

উদাহরণ ১.

√3 এবং 4 এর মধ্যে দুইটি অমূলদ সংখ্যা নির্ণয় কর ।

সমাধান:

এখানে, √3 = 1.7320508…

মনে করি, √3 এবং 4 এর মধ্যে যেকোনো দুইটি অমূলদ সংখ্যা a ও b

যেখানে a = √3 + 1 এবং b = √3 + 2

স্পষ্টত: a ও b উভয়ই অমূলদ সংখ্যা এবং উভয়ই V3 এবং 4 এর মধ্যে অবস্থিত ।

অর্থাৎ √3 < √3 + 1 < √3 + 2 < 4

a ও b দুইটি নির্ণেয় অমূলদ সংখ্যা ।

মন্তব্য: এরূপ অসংখ্য অমূলদ সংখ্যা নির্ণয় করা যায় ।

বাস্তব সংখ্যার যোগ ও গুণন প্রক্রিয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্য:

১. a, b বাস্তব সংখ্যা হলে, (i) a + b বাস্তব সংখ্যা এবং (ii) ab বাস্তব সংখ্যা

২. a, b বাস্তব সংখ্যা হলে (i) a + b = b + a এবং (ii) ab = ba

৩. a, b, c বাস্তব সংখ্যা হলে (i) (a + b) + c = a + (b + c) এবং (ii) (ab) c = a (bc)

8. a বাস্তব সংখ্যা হলে, কেবল দুইটি বাস্তব সংখ্যা 0 ও 1 আছে যেখানে (i) 0 1, (ii) a + 0 = 0 + a = a এবং (iii) a· 1 = 1. a = a

৫. a বাস্তব সংখ্যা হলে, (i) a + (-a) = 0 (ii) a ≠ 0 হলে, a.1/a = 1

৬. a, b, c বাস্তব সংখ্যা হলে, a (b + c) = ab + ac

৭. a, b বাস্তব সংখ্যা হলে a < b অথবা a = b অথবা a > b

৮. a, b, c বাস্তব সংখ্যা এবং a < b হলে, a + c < b + c

৯. a, b, c বাস্তব সংখ্যা এবং a < b হলে, (i) ac < be যখন c > 0 (ii) ac > bc যখন c < 0

 

অসীম ধারার আংশিক সমষ্টি

 

প্রতিজ্ঞা:

√2 একটি অমূলদ সংখ্যা।

প্রমাণ:

ধরি √2 একটি মূলদ সংখ্যা।

তাহলে এমন দুইটি পরস্পর সহমৌলিক স্বাভাবিক সংখ্যা p,q > 1 থাকবে যে, √2  = p/q

বা, 2 = p2 /q2 [বর্গ করে] অর্থাৎ 2q = p2 /q[উভয়পক্ষকে g দ্বারা গুণ করে ]

স্পষ্টত 2q পূর্ণসংখ্যা কিন্তু পূর্ণসংখ্যা নয়, কারণ p ও q স্বাভাবিক সংখ্যা, এরা পরস্পর সহমৌলিক এবং q > 1 ।

2q এবং p2/q সমান হতে পারে না, অর্থাৎ 2g †

√2 কে P আকারে প্রকাশ করা যাবে না, অর্থাৎ √2 P/q

.:. √2 একটি অমূলদ সংখ্যা।

google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

মন্তব্য:

যৌক্তিক প্রমাণের সমাপ্তির চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ ২.

প্রমাণ কর যে, কোনো চারটি ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যার গুণফলের সাথে 1 যোগ করলে যোগফল একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা হবে।

সমাধান:

মনে করি, চারটি ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যা যথাক্রমে x, x + 1 + 2 + 3.

ক্রমিক সংখ্যা চারটির গুণফলের সাথে 1 যোগ করলে পাওয়া যায়,

x ( x + 1 ) ( x + 2 ) ( x + 3 + 1

= x (x + 3) (x + 1 ) ( x + 2) + 1

= (x²+3x)(x²+3x+2)+1

= a (a + 2 ) + 1 [এবার x 2 + 3 = = a ধরে]

= a2 + 2a + 1 = (a + 1 ) 2

= (x² + 3x + 1)²

যা একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা। সুতরাং যে কোনো চারটি ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যার গুণফলের সাথে 1 যোগ করলে যোগফল একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment