আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ বীজগণিতীয় রাশির গুণ । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের অজানা রাশির সূচক, গুণ ও তাদের প্রয়োগ এর অন্তর্গত।
বীজগণিতীয় রাশির গুণ
নিচের উদাহরণ এর মাধ্যমে সংখ্যারেখায় কীভাবে গুণ কাজ করে তা দেখানো হল। এখানে ৪ টি সমস্যা দেয়া আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সংখ্যারেখায় প্রকাশ করা হয়েছে। এবার নিচের সমস্যাগুলো লক্ষ করো:
১) (+2) × (+3)
সংখ্যারেখায় গুণফলের অবস্থান (+6)। এক্ষেত্রে গুণফলের গতিপথ সংখ্যারেখার ডানদিকে দেখানো হয়েছে। (+2) × (+3) = 2+2+2 = +6
২) এখানে প্রথম সংখ্যার (+) চিহ্নর জন্য সংখ্যাটিকে সংখ্যারেখার ডান দিকে যেতে হয়েছে। অতঃপর গুনফলের আগে (—) চিহ্ন থাকায় গুণফলের গতিপথের দিক পরিবর্তন হয়ে শূন্য (০) এর সাপেক্ষে সংখ্যারেখায় বাম দিকে অবস্থান করছে।
(+2) (-3)=(-3) + (-3)=-6
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সংখ্যারেখায় গুণফলের অবস্থান (- 6)।
(+2) x (-3) = (-3)+(-3) = – 6
৩) (-2) × (+3) সংখ্যারেখায় গুণফলের অবস্থান (-6)। কিন্তু এখানে প্রথম সংখ্যার (-) চিহ্নর জন্য সংখ্যাটিকে সংখ্যারেখার বাম দিকে বসানো হয়েছে।
(-2) x (+3)=(-2)+(-2)+(-2) = -6
(-2) x (-3)
সংখ্যারেখায় গুণফলের অবস্থান (+6)। এক্ষেত্রে প্রথমসংখ্যার গতিপথ সংখ্যারেখার বামদিকে গিয়েছে এবং পরবর্তীতে গুণফলের আগে (-) চিহ্ন থাকায় দিক পরিবর্তন করে শূন্য (০) এর সাপেক্ষে (+6)) এ যেতে হয়েছে।
(-2) x (-3) -[(-2)+(-2)+(-2)] = (-6) = +6
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা নিচের সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারিঃ
1. (+1).(+1)=+1
2. (+1).(-1)=-1
3. (-1).(+1)=-1
4. (-1).(-1)=+1
লক্ষ করি:
# একই চিহ্নযুক্ত দুইটি রাশির গুণফল (+) চিহ্নযুক্ত হবে।
# বিপরীত চিহ্নযুক্ত দুইটি রাশির গুণফল (-) চিহ্নযুক্ত হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় তোমরা সংখ্যার গুণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিখেছো। পাটিগণিতে কেবল ধনাত্নক চিহ্নযুক্ত সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বীজগণিতে ধনাত্নক ও ঋণাত্মক উভয় চিহ্নযুক্ত সংখ্যা এবং সংখ্যাসূচক প্রতীকও ব্যবহার করা হয়। এ অধ্যায়ে আমরা বীজগণিতীয় রাশির গুণ ও ভাগ প্রক্রিয়া এবং বীজগণিতীয় রাশির গুণ ও ভাগের সূচক সম্বন্ধে শিখব।
কর্মপত্র ১: বিদ্যালয়ে বাগান তৈরির পরিকল্পনা
একটি বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান স্কুল আঙ্গিনায় একটি বাগান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বাগানের কিছু অংশ সবজি চাষের জন্য এবং কিছু অংশ ফল গাছ লাগানোর জন্য নির্ধারণ করা হলো। বাগানটির ক্ষেত্রফল কত হবে চলো আমরা এর সম্ভাব্য একটি পরিকল্পনা করি।
পরিকল্পনার শুরুতেই প্রত্যেকেই খাতা কলম নিয়ে বাগাটির নিম্নরূপ সম্ভাব্য কাগজের মডেল তৈরি /অঙ্কন করো এবং সবজি ও ফল গাছ বাগানের অংশ দু’টিকে পৃথক রঙ করো। বাগানটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল =4(6+3) বর্গমিটার= (4×9) বর্গমিটার = 36 বর্গমিটার
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় সবজি বাগানটির দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করতে। তাই বাগানটির দৈর্ঘ্য X দ্বারা পরিবর্তন করা হলো।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফলে পরিবর্তন লক্ষ করো।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল হবে =4(x+3)বর্গমি. =(4x+12) বর্গমি.
এখন, প্রস্থ ঠিক রেখে গাছ বাগানের দৈর্ঘ্য y দ্বারা পরিবর্তন করা হলো। ফলে সম্পূর্ণ বাগানের ক্ষেত্রফলে কি পরিমাণ পরিবর্তন লক্ষ করলে?
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল হবে = 4(x+y) বর্গমিটার। তাহলে এখানে বাগানের ক্ষেত্রফলকে বীজগণিতীয় রাশির মাধ্যমে প্রকাশ করা হল।
এ পর্যায়ে মনে কর, বাগানটিতে পানি ধরে রাখার জন্য একটি গর্ত রাখার ব্যবস্থা করার জন্য বাগানটি তিনটি অংশে বিভক্ত করা হলো এবং মডেলটি নিম্নরুপে পরিবর্তন করা হলো।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল হবে =4(x+y+z) বর্গমি. = (4x+ 4y + 4z) বর্গমি
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি উপরে প্রতিটি ক্ষেত্রে, a(b + c)= ab + bc, আকারে বীজগণিতীয় রাশির | গুণের ফলাফল লেখা হয়ে থাকে, যাহা গুণের বন্টন বিধি নির্দেশ করে।
এবার স্কুল পরিকল্পনা করল বিদ্যালয় ভবনের করিডোর বাড়াতে হলে সবজি বাগানের দৈর্ঘ্য 3মিটার কমাতে হবে। ফলে পরিকল্পনাটি তারা পুনরায় নিম্নরুপে পরিবর্তন করল।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল হবে = 4(x – 3) + 4y বর্গমি
কর্মপত্র ২ – বিদ্যালয়ে পুকুর খনন পরিকল্পনা
এবার বিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর জন্য মৎস্য চাষের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে একটি বর্গাকৃতি পুকুর খননের চিন্তা করল। শিক্ষার্থীরা পুকুর খননের জন্য কি পরিমাণ জমি লাগবে তা নির্ধারণ করার জন্য x দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কাগজের বর্গাকৃতি একটি মডেল তৈরি করল:
এ ক্ষেত্রে পুকুরের সম্ভাব্য ক্ষেত্রফল = x 2 বর্গমি
এবার শিক্ষার্থীরা পুকুরটিকে আয়তাকৃতি প্রদান করতে চাইল এবং পুকুরের দৈর্ঘ্যকে 3মি বাড়িয়ে নিম্নের চিত্রের মত মডেল তৈরি করল।
এ ক্ষেত্রে পুকুরটির ক্ষেত্রফল = (x + 3) x বর্গমি. = x(x + 3) বর্গমি.
এবার শিক্ষার্থীরা প্রস্থকেও 2মি.বাড়িয়ে দিলো এবং নিম্নের চিত্রের মত মডেল তৈরি করল।
এ ক্ষেত্রে পুকুরটির ক্ষেত্রফল
= (x + 3) (x + 2) = x 2 + 3x + 2x + 6 = x 2 + 5x + 6 বর্গমি
এবার পুকুরের ক্ষেত্রফল পরিবর্তনের বিকল্প হিসাবে প্রস্থকে 3মি কমিয়ে নিম্নের চিত্রের মত মডেল তৈরি করল।
এ ক্ষেত্রে পুকুরটির ক্ষেত্রফল = x (x – 3) বর্গমি = x2 – 3x বর্গমিটার
পূনরায় পুকুরের দৈর্ঘ্যকে 2মি কমিয়ে নিম্নের চিত্রের মত মডেল তৈরি করা হলো।
এ ক্ষেত্রে পুকুরটির ক্ষেত্রফল = (x – 2) (x – 3) বর্গমি. = x(x – 3) – 2(x – 3) বর্গমি.
এবার শিক্ষার্থীরা তৃতীয় একটি বিকল্প চিন্তা করল। তারা দৈর্ঘ্যকে 3মি.বাড়িয়ে এবং প্রস্থকে 2মি. কমিয়ে নিম্নরুপ মডেল তৈরি করল।
এ ক্ষেত্রে বাগানটির ক্ষেত্রফল = (x + 3) (x – 2 ) বর্গমি. = x 2 + 3x – 2x – 6 বর্গ মি.
নিচের উদাহরণ লক্ষ করো। এখানে দুইটি বীজগণিতীয় রাশিকে কাগজ কেটে গুণ করার পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
উদাহরণ ১:
গুণফল নির্ণয় করো: (x+4) (2x+1)
গুণফল নির্ণয় করার জন্য তোমরা কাগজ কেটে নিম্নরুপ কাগজ কেটে টাইলস বানাও ।
নিম্নের চিত্রের মত উৎপাদক গুলিকে টাইলস আকারে কাগজ কেটে বসাও।
এবার কলাম অংশের প্রত্যেক টাইলস দিয়ে সারির অংশের প্রত্যেক কাগজকে গুণ করে সারি-কলাম এর সমন্বয়ে তৈরি ক্ষেত্রে বসাও। ফলে নিচের চিত্রের মত একটি আয়তাকার ক্ষেত্রফল পাবে
টাইলসগুলো দিয়ে তৈরি আয়তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল পেতে সব গুলো কাগজ পর্যায়ক্রমে যোগ করো। যেমন:
= 2×2 + 9x + 4.
কাগজ কেটে গুণ করো: 2x+y-1, 3x
উদাহরণ:
(x + 2) (3x – 2 ) বাহু বিশিষ্ট আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার জন্য তোমরা উৎপাদক দু’টিকে কাগজ দিয়ে নিম্নের মত সাজাও। এ ক্ষেত্রে ধনাত্নক ও ঋণাত্মক কেটে দেয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে
( x + 2) (3x – 2 ) = 3×2 + 6x – 2x – 4 = 3×2 + 4x – 4
উদাহরণ:
গুণফল নির্ণয় করো: (x+3) (x-7)
ফলে গুণফল পাওয়ার জন্য পদগুলোকে পর্যায়ক্রমে নিম্নরুপে বসাও।
(x+3)(x-4)=x2-7x+3x-21=x2-4x-21
কর্মপত্র ৩:
(a+b) (a-b) এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় (পেপার মডেল)
প্রথমে একটি সাদা কাগজ নাও। তারপর ৫ বাহু বিশিষ্ট একটি বর্গ আঁক। একে চিত্রের মত রঙ করো। অত:পর এটির এক কোণায় b বাহু বিশিষ্ট আরেকটি বর্গ আঁক এবং লাল রঙ করো। এবার বড় বর্গ অর্থাৎ a বর্গক্ষেত্র থেকে ছোট বর্গ অর্থাৎ b বর্গক্ষেত্র কেটে বাদ দাও। ফলে চিত্রটি নিম্নরুপ আকৃতি ধারণ করবে।
উৎপন্ন আয়তক্ষেত্রটি ক্ষেত্রফল হবে= (a+b) (a – b)
পরিশেষে আমরা উপরের চিত্র থেকে পাই, (a + b) (a – b) = a2 – b2
এবার, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাগানে পানি দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বাগানের পাশে আরো একটি পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করার ব্যবস্থা রাখল।
পানির ট্যাঙ্কের দৈর্ঘ্য (x + 2) মি. প্রস্থ x মি. ও উচ্চতা (2x + 1) মি. হলে, উহার আয়তন নির্ণয় করার জন্য শিক্ষার্থীরা নিম্নের চিত্রের ন্যায় কাগজ কেটে বক্স বানালো এবং নিম্নরুপে উহার আয়তন নির্ণয় করল।
পানির ট্যাঙ্কের দৈর্ঘ্য (x + 2)মি. এবং প্রস্থ x মি. এবং উচ্চতা (2x + 1) মি.
পানির ট্যাঙ্কের আয়তন= (x + 2) মি. × প্রস্থ x মি. × উচ্চতা (2x + 1) মি.
= (x + 2).x. (2x + 1) = x(x + 2) (2x + 1)
= (x2 + 2x) (2x + 1) = 2×3 + x2 + 2x 2 + 2x = 2×3 + 3×2 + 2x ঘনমি.

আরও দেখুনঃ