আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শতকরার নিয়ম – যা ঐকিক নিয়ম, শতকরা এবং অনুপাত অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।১৭শ শতক পর্যন্ত কেবল পাটীগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতিকে গাণিতিক শাস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হত। সেসময় গণিত দর্শন ও বিজ্ঞানের চেয়ে কোন পৃথক শাস্ত্র ছিল না। আধুনিক যুগে এসে গণিত বলতে যা বোঝায়, তার গোড়াপত্তন করেন প্রাচীন গ্রিকেরা, পরে মুসলমান পণ্ডিতেরা এগুলি সংরক্ষণ করেন, অনেক গবেষণা করেন এবং খ্রিস্টান পুরোহিতেরা মধ্যযুগে এগুলি ধরে রাখেন। তবে এর সমান্তরালে ভারতে এবং চীন-জাপানেও প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে স্বতন্ত্রভাবে উচ্চমানের গণিতচর্চা করা হত। ভারতীয় গণিত প্রাথমিক ইসলামী গণিতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
১৭শ শতকে এসে আইজাক নিউটন ও গটফ্রিড লাইবনিৎসের ক্যালকুলাস উদ্ভাবন এবং ১৮শ শতকে অগুস্তঁ লুই কোশি ও তার সমসাময়িক গণিতবিদদের উদ্ভাবিত কঠোর গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলির উদ্ভাবন গণিতকে একটি একক, স্বকীয় শাস্ত্রে পরিণত করে। তবে ১৯শ শতক পর্যন্ত কেবল পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ ও প্রকৌশলীরাই গণিত ব্যবহার করতেন।
শতকরার নিয়ম
শতগ্রিডে শতকরা উপকরণ:
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক A4 সাইজের কাগজ (প্রতিটিতে ১০০ ঘরের ছক বিশিষ্ট)
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১-১০ পর্যন্ত লেখা ১০টি কাগজের ছোট টুকরা
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক রং পেন্সিল (দুই রঙের)
- আজ আমরা একটি মজার খেলা খেলব। খেলাটি খেলতে হবে জোড়ায় জোড়ায়।
- প্রতি জোড়ার জন্য নিচের ছবির মতো একটি করে এফোর সাইজের কাগজে ১০০ ঘরের ছক তৈরি করে নাও। প্রয়োজনে শিক্ষকের সাহায্য নাও।
১০০ ঘরের ছক
- জোড়ার দুইজন শিক্ষার্থীর হাতে দুই রঙের রং পেন্সিল নাও।
- প্রতি জোড়ায় ১-১০ পর্যন্ত লেখা ১০টি কাগজের ছোট টুকরা তৈরি করো।
- এই ১০টি কাগজের টুকরা ভাঁজ করে দুইজনের মধ্যে লটারি করতে হবে। লটারিতে যে শিক্ষার্থী যে সংখ্যা পাবে সে ছকের ততগুলো ঘর তার হাতের রং পেন্সিল দিয়ে ভরাট করবে।
- তারপর আবার লটারি করো। এবারেও একইভাবে যার যার সংখ্যা অনুযায়ী হাতে থাকা রং পেন্সিল দিয়ে রং করো। এভাবে সবগুলো ঘর ভরাট হওয়া পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে রং করতে থাকো।
- খেলতে খেলতে ছকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে যে কয়টি ঘর বাঁকি থাকে লটারির মাধ্যমে তাকে সেই সংখ্যাটিই পেতে হবে। তাহলেই সে রং পেন্সিল দিয়ে ভরাট করতে পারবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যাটি না পেলে পুনরায় লটারি করতে হবে।
- এখানে মোট ১০০টি ঘর ছিল। তোমরা নিজের রং পেন্সিল দিয়ে ভরাট করা ঘরগুলো গণনা করে দেখো কে কতগুলো করে ঘর রং করতে পেরেছ?
- দুইজনের রং করা ঘরের যোগফল কিন্তু ১০০ হবে। অর্থাৎ ১০০টার মধ্যে কে কতগুলো রং করেছ তা বের করো।
- যে রঙের ঘর বেশি হবে সেই বিজয়ী হবে।
- মোট ঘর ছিল ১০০টি। জোড়ার ১ম শিক্ষার্থী রং করতে পেরেছে ১০০ এর মধ্যে ৫৬টি, আর জোড়ার ২য় শিক্ষার্থী রং করতে পেরেছে ১০০ এর মধ্যে ৪৪টি।
- ব্যাপারটা আমরা এভাবে লিখতে পারি-
- জোড়ার ১ম শিক্ষার্থী রং করেছে ১০০ এর মধ্যে ৫৬টি বা ৫৬/১০০ অংশ বা ৫৬%
- জোড়ার ২য় শিক্ষার্থী রং করেছে ১০০ এর মধ্যে ৪৪টি বা ৪৪/১০০ অংশ বা ৪৪%
- ভাবছ এই প্রতীকটা আবার কী?
- এটা হচ্ছে শতকরার প্রতীক।

%
‘শতকরা হলো এমন একটি ভগ্নাংশ যার হর ১০০’
‘শতকরা’ নামটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা শত বা ১০০ এর সাথে সম্পর্কিত।
উপরের উদাহরণ থেকে দেখা যায়, ভগ্নাংশের হর ১০০ করা হলে লবের মান থেকে জানা যায় ১০০ এর মধে কত অংশ, আর সেটাই হলো শতকরা।
আবার, % চিহ্ন দ্বারা ১০০ এর মধ্যে ১ অংশ বা ১/১০০ বোঝানো হয়।
চিত্রে সবুজ রং দিয়ে % বা ১/১০০ দেখানো হলো।
আবার,
১% = ১/১০০ কেও একই চিহ্ন দিয়ে বোঝানো যায়।
- নিচের উদাহরণগুলো থেকে শতকরা প্রতীকের অর্থ ও ব্যবহার বুঝতে পারবে।
১) (ক) এখানে শতকরা কত অংশ সবুজ রং করা হয়েছে?
সবুজ রং করা হয়েছে = ? %
(খ) সবুজ রং করা আকৃতিটির নাম কী? তুমি কি আগে কখনো দেখেছ এমন আকৃতি?
২) নিচের ছবিগুলোতে সম্পূর্ণ অংশের শতকরা কত অংশ সবুজ রং এবং কত অংশ লাল রং করা হয়েছে?
(খ) সবুজ রং করা আকৃতিটির নাম কী? তুমি কি আগে কখনো দেখেছ এমন আকৃতি?
৩) নিচের ছবিতে দর্শকসারি বা গ্যালারির শতকরা কত অংশ দর্শকপূর্ণ আছে এবং শতকরা কত অংশ খালি আছে?
আরও দেখুনঃ