আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ সূচক নিয়ে কারিকুরি । এটি সপ্তম শ্রেনী গণিতের সূচকের গল্প এর অন্তর্গত।
সূচক নিয়ে কারিকুরি
আমরা একটি অদ্ভুত মহাকাশযানের গল্প শুনি। অদ্ভুত কেন বলছি? কারণ এই মহাকাশযানটির গতিবেগ সবসময় ৪ ভিত্তিতে হয়। অর্থাৎ, এর বেগটি প্রতি সেকেন্ডে ৪ এর কোন না কোন ধনাত্মক ঘাত হয়। আরেকটু সহজে বললে, মহাকাশযানটির ১ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দুরত্ব ৪ এরই কোন ধনাত্মক ঘাত হবে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ৪ চিন্তা করতে পারি। এই ক্ষেত্রে মহাকাশযানটি এক সেকেন্ড চললে, ৪ মিটার দুরত্ব অতিক্রম করবে।
তবে মনে রাখতে হবে এই বেগটি কিন্তু নির্দিষ্ট নয়। এটি বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে। শুধু এটুকু নিশ্চিত বেগটি সর্বদাই ৪ এর ঘাত হবে।
মহাকাশযানের চালক, মহাকাশযানের মনিটরে বসে দেখতে পারেন সময়ের সাপেক্ষে সেই মহাকাশযানটি কতদূর অতিক্রম করলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সেই মনিটরে আবার সময়টিও ৪ এর ঘাত হিসেবে দেখা যায়। অর্থাৎ, চালক চাইলেই ২ সেকেন্ড পর অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখতে পারবেন না। তিনি ৪^১ = ৪ সেকেন্ড বা ৪^২ = ১৬ সেকেন্ড এরকম সময় ব্যবধানেই বিমানের অতিক্রান্ত দুরত্বটি দেখতে পাবেন।
মনিটরে সময়ের এই ব্যাপারটি একটি ক্রম মেনেই চলবে। যেমন চালক প্রথমে ৪` সেকেন্ড সময় ব্যবধানে অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখতে পাবেন। এরপর এই ৪ সেকেন্ড এর পর হতে, পরবর্তী ৪২ সেকেন্ডে মহাকাশযানটি কতটুকু দুরত্ব অতিক্রম করলো সেটি দেখতে পাবেন। তারপর, আবার ৪^২ সেকেন্ড হতে পরবর্তী ৪^৩ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দুরত্বটি দেখতে পারবেন এবং এভাবে চলবে। এটুকু মনে রাখতে হবে, কখনই ৪২ সেকেন্ডের পর পরবর্তী ৪^৫ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখা যাবে না।

একদিন মহাকাশযানটি চালনা করার সময় চালক দেখলেন তাঁর বেগটি নির্দিষ্ট এবং সেই বেগটি হলো প্রতি সেকেন্ডে ৪^১ = ৪ মিটার। এটি বাড়ছেও না কমছেও না। তিনি প্রথমে ৪^১ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর অতিক্রান্ত দুরত্বটি দেখতেও পেলেন। তিনি এর পরবর্তী ৪^২ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখার পর, মহাকাশযানটি হঠাৎ একটি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো এবং এর পরবর্তী সময় ব্যবধান থেকে মনিটরে কোন অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখা গেল না। মহাকাশযানের চালক মুশকিলে পড়লেন, কারণ তাঁর এই অতিক্রান্ত দুরত্বগুলো জানা জরুরি। তুমি কি মহাকাশযান চালককে একটু সাহায্যে করতে পারবে?
চিন্তা করো, মহাকাশযানটি ১ সেকেন্ডে ৪^১ = ৪ মিটার দুরত্ব অতিক্রম করে ।
তাহলে, ৪^১ সেকেন্ডে কত দুরত্ব অতিক্রম করবে? ঐকিক নিয়মের ধারণা থেকে আমরা বলতে পারি, ৪ সেকেন্ড সময় ব্যবধানে মহাকাশযানটির অতিক্রান্ত দুরত্ব হবে 8^১ x 8 = 8 x 8 = 8^২
তাহলে, দ্বিতীয় সময় ব্যবধানে মহাকাশযানটির অতিক্রান্ত দুরত্ব কত হবে ভেবে বের করতে পারবে?
মহাকাশযানটি ১ সেকেন্ডে অতিক্রম করে ৪^১ = ৪ মিটার
অতএব, ৪২ সেকেন্ডে অতিক্রম করবে, ৪২ x 8 = 4 × 8 x 8 = ৪° মিটার
ছক ১
এভাবে উপরের ন্যায় ৭ টি সময় ব্যবধান অতিক্রান্ত হওয়ার পর চালক মহাকাশযানটি অবতরণ করান এবং কারিগরি দলকে মনিটরের ত্রুটি ঠিক করার নির্দেশনা দেন।
কিন্তু, পরবর্তী দিন অতি জরুরি একটি কারণে চালককে আবার মহাকাশযানটি চালনা করতে হয়। ফলে মনিটরের ত্রুটিটি থেকেই যায়। তবে, আগের দিন যেমন প্রথম দুটি সময় ব্যবধানে চালক তাঁর অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখতে পেয়েছিলেন, এই দিন শুধু প্রথম সময় ব্যবধানে তাঁর অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখতে পেলেন এবং বাকি কোন সময় ব্যবধানেই তাঁর অতিক্রান্ত দুরত্ব দেখতে পেলেন না। এদিন আরেকটি ভিন্নতা ছিল। আগের দিনে যেমন প্রতি সময় ব্যবধানে মহাকাশযানটির গতিবেগ একই ছিল, এদিন কিন্তু তাঁর মহাকাশযানের গতিবেগ প্রতিটি সময় ব্যবধানে ভিন্ন ছিল। সেদিনে, তাঁর রকেটের সময় ব্যবধান ও বেগ ছকে দেয়া আছে। প্রতি সময় ব্যবধানে অতিক্রান্ত দুরত্বটি নির্ণয় করে, তোমরা কী চালককে সাহায্য করতে পারবে?
ছক ২
এখন, প্রতিবারে একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে অতিক্রান্ত দুরত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে তোমাকে কি করতে হচ্ছে? প্রতিবারে সূচকাকারকে ভেঙ্গে গুণাকারে লিখতে হচ্ছে। তারপর গুণাকারে থাকা মোট সংখ্যাগুলো গণনা করতে হচ্ছে। এরপরে আবার সূচকীয় আকারে লিখতে হচ্ছে। এই কাজটি করার জন্য নিশ্চয় অনেক সময় লাগছে, আবার অনেক পরিশ্রম করা লাগছে। কিন্তু আমরা তো দেখেছি সূচকের সাহায্যে অনেক বড় বড় গুণকে সহজে ও কম সময়ে লিখে ফেলা যায়। তবে, প্রতিবার যদি এমনভাবে বড় বড় গুণাকার নিয়ে কাজ করা লাগে তাহলে কি কাজ সহজ হয়? তাই, এসো আমরা আরেকটি নতুন বিষয় শিখি। এবারও তোমাদের জোড়-বিজোড় রোলের সাহায্য নিব। অর্থাৎ, যাদের রোল জোড়, তারা ৬ সংখ্যাটি ব্যবহার করবে এবং যাদের রোল বিজোড় তারা ৫ সংখ্যাটি ব্যবহার করবে।
নিচের ছক ৩ ভাল করে লক্ষ্য করো। সাহায্যের জন্য পুরো ছকটি পূরণ করে দেয়া আছে। এর সাহায্যে পরবর্তীতে ছক-২.৪ পূরণ করতে হবে।
ছক ৩
(ছকে গুণের ভিত্তি হিসেবে ১০ ধরা হয়েছে। )
ছক ৪
(ছক ৩ এর কাজ অনুযায়ী ১০ এর বদলে তোমার নেয়া সংখ্যাকে ভিত্তি ধরে নিচের ছকে গুণফল কি হবে তা নির্ণয় করো এবং প্রয়োজনে নিজের খাতায় ছকটি সম্পূর্ণ করো। )
এখন ছক ৩ ও ছক ৪ এর আলোকে তুলনা করার চেষ্টা করো। কি বুঝতে পারলে?
যদি একই ভিত্তি হয়, তাহলে দুটি সূচকীয় কাঠামোকে গুণ করা হলে, গুণফলটিও একই ভিত্তির একটি সূচকীয় কাঠামো হয়। নতুন সূচকীয় কাঠামোর সূচক বা ঘাতটি হয়, গুণ্য ও গুণকের সূচক বা ঘাতের যোগফল। এরপরে প্রদত্ত ছকের সাহায্যে বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝা যাবে। ছকটি আংশিক পূর্ণ করা রয়েছে।
ছক ৫ (ছক ৩ ও ছক ৪ এর ক্রমিক অনুযায়ী ছকটি পূরণ করতে হবে। ছকটি আংশিক পূরণ করা আছে। তোমার শিখন ও ছক দুটি হতে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে ছকটি সম্পূর্ণ করো)
আরও দেখুনঃ